Breaking News

সিম কার্ড কি? সিম কার্ড কিভাবে কাজ করে? বিস্তারিত জানুন

প্রযুক্তির উন্নয়নের ও যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম একটি উপাদান হলো সিম কার্ড। যোগাযোগের একটা পর্যায়ে মানুষজন তার (Wire) ব্যবহার করে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো। কিন্তু এটি ছিল অনেক কষ্টকর ও অসন্তুষ্টজনক ব্যবহার। পরবর্তীতে সিম কার্ডের আবিষ্কার হয় এবং আমরা এর ফলে সহজেই যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছি।

প্রযুক্তির আরও একটি অন্যতম উপাদান বা আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইল ফোনে আমরা সকলেই সিম কার্ড ব্যবহার করে থাকি। আজ এমন কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া কঠিন যিনি কখনও সিম কার্ড ব্যবহার করেন নি। অনেক সময় হয়তো আমাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে যে, সিম কার্ড কি? কিংবা সিম কার্ড কিভাবে কাজ করে? ইত্যাদি বিষয়ে।

যদি আপনি এসকল বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের ’’সিম কার্ড’’ আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম! আজকের আর্টিকেলে সিম কার্ডের পরিচয়, সিম কার্ডের আবিষ্কারক, সিম কার্ডের প্রকার সহ, সিম কার্ড কিভাবে কাজ করে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করা হলো-

আরও পড়ুন- কম্পিউটার কিবোর্ড শর্টকাট ও এর ব্যবহার

সিম কার্ড কি?

ইংরেজি শব্দ সিম (SIM) এর পূর্ণরূপ হলো ’’সাবসক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল’’ (Subscriber Identity Module) যার বাংলা অর্থ ‘গ্রাহক পরিচিতি মডিউল’। এটি একটি সমন্বিত বর্তনী (Integrated Circuit) যা মোবাইল ফোনের জন্য প্রয়োজনীয় ‘সার্ভিস সাবসক্রাইবার কী’ (Service-subscriber Key (IMSI)) এর সাথে সংযুক্ত।

সিম কার্ড মূলত একটি এক্সটার্নাল চিপ যা ব্যবহার করার জন্য মোবাইল ফোন বা মডেম জাতীয় ডিভাইসের মধ্যে প্রবেশ করাতে হয়। আমরা SIM কার্ডের মধ্যে মেটালের (গোল্ডেন কালার) যে অংশটি দেখতে পাই তার মধ্যে থাকে চিপসেট। এটিই মূলত সিম কার্ডের প্রধান অংশ। এই চিপ এর মধ্যে থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টোরেজ, প্রসেসর, র‌্যাম। এসব কিছু মিলিয়েই আমাদের সিম কার্ডটি তৈরি হয় এবং কাজ করে থাকে।

মেটালের অংশটি ব্যতীত বাইরের যে প্লাস্টিকের অংশ থাকে সেটি মূলত ডিভাইস ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যে ডিভাইসের জন্য যেরকম সিম প্রয়োজন হয় সিমের মূল অংশের সাথে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করে সেই ডিভাইসে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করা হয়ে থাকে। এই জন্যই সময়ের সাথে সাথে সিমের আকৃতি ও গঠন পরিবর্তন হচ্ছে।

সিম কার্ড আকারে ছোট হলেও এটি ব্যবহারের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিভাইস থেকে যোগাযোগের কোনো অর্ডার পেলে সিমে থাকা ছোট্ট সেই চিপ নিকটবর্তী টাওয়ারে নিকট তা স্থান্তর করে আবার অন্য টাওয়ার থেকে পাওয়া অর্ডারের মাধ্যমে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।

একটি SIM কার্ডে সাধারণত ৮ কিলোবাইট থেকে ২৫৬ কিলোবাইট পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করা যায় এবং ২৫০টির মতো নাম বা কন্টাক্ট নম্বর সংরক্ষণ করার ক্ষমতা থাকে।

আমাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলি দুই (২) ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ১. (GSM) গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল এবং ২. (CDMA) কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস। শুধুমাত্র GSM ফোনগুলিতে SIM কার্ড ব্যবহার করার প্রেয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু CDMA ফোনগুলিতে এটি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।

সিম কার্ড কে আবিষ্কার করেন?

যেহেতু আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি সিম কার্ড-কে নিয়ে; সেহেতু সিম কার্ড কে, কখন আবিষ্কার করেছে তা জানাটাও জরুরি। জিসেকে এন্ড ডিভ্রিয়েন্ট (Giesecke And Devrient) নামক একটি জার্মানি কোম্পানি ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম সিম কার্ড আবিষ্কার করেন।

কিন্তু জার্মানি এর আবিষ্কারক হওয়া স্বত্বেও দেশটি প্রথম সিম কার্ড ব্যবহার করেনি। সিম কার্ড আবিষ্কৃত হবার পর ফিনল্যান্ডের Radiolinji নামক একটি কোম্পানি জার্মানির Giesecke And Devrient এর কাছ থেকে ৩০০টি সিম ক্রয় করে এবং ফিনল্যান্ড সেগুলো সর্বপ্রথম ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন- বিশ্বের সব দেশের নাম, রাজধানী এবং মুদ্রার নাম

সিম কার্ডের প্রকাররভেদ (Type of SIM Card)

সময়ের পরিবর্তন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আমাদের চাহিদার কারণে SIM কার্ডের কিছু প্রকারভেদ সৃষ্টি হয়েছে। নেটওয়ার্ক কনফিগারেশন দিক থেকে SIM কার্ড কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

  • 2G
  • 3G
  • 4G
  • 5G ইত্যাদি।

সাইজের দিক থেকেও সিম কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। সময় যতো যাচ্ছে, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের মোবাইল ফোনগুলিতে বিভিন্ন ধরনের সেনসর, আইসি যুক্ত করে SIM কার্ডের জায়গাকে ছোট করা হচ্ছে। ফলে বড় আকৃতির সিমের ব্যবহার কমে এসেছে।

সিম আকার ও আকৃতির দিক থেকে পাঁচ () ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন-

সিম কার্ডের প্রকাররভেদ (Type of SIM Card)

1. Standard/Full SIM:- এই সিমটি প্রথমে ১৯৯১ সালে জার্মানিতে আবিষ্কার করা হয়েছিল। এটি দেখতে অনেকটা বর্তমান সময়ের ক্রেডিট কার্ডের মতো ছিল। এটির সাইজ ছিল 85mm x 53mm.

2. Mini SIM:- সিম কার্ড ব্যবহারের দ্বিতীয় ধাপে মিনি সিমের প্রচলন শুরু হয়। বর্তমান সময়ে এখনও অধিকাংশ মোবাইল ফোন ও কীপ্যাড সহ ফোনগুলিতে এই মিনি সিম ব্যবহৃত হয়। এটির সাইজ ছিল 25mm x 15mm.

3. Micro SIM:- মোবাইল ফোনের আরও কিছু উন্নতির ফলে মিনি সিমের পরিবর্তে মাইক্রো সিম ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। এটি অনেকটাই মিনি সিমরে মতো দেখতে তবে, শুধুমাত্র চারদিক থেকে কেটে কিছুটা ছোট করা হয়েছে। এটি এখনও অধিকাংশ স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটির সাইজ ছিল 15mm x 12mm.

4. Nano SIM:- বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে এই ন্যানো সিম। এন্ড্রয়েড ও আইফোন সকল ডিভাইসের জন্য এটি প্রযোজ্য। এটি থেকে সিমের অতিরিক্ত অংশ বা প্লাস্টিক-কে ফেলে দিয়ে শুধুমাত্র সিমের চিপটি রাখা হয়েছে। বলা যায় এটি চিপ সিম। এটির সাইজ 12.3mm x 8.8mm.

5. E-Sim:- সিম কার্ডের সর্বশেষ সংকলন হচ্ছে এই ই-সিম। এটি এমবেডেড সিম নামেও পরিচিত। এই সিমের আকার অনেক ছোট। এটি মোবাইল ফোনে থাকা অন্যান্য পার্সের ন্যায় অটোমেটিক ইন্সটল করা থাকে যা দূরবর্তীভাবে সক্রয়ি করা যেতে পারে।

ই-সিম মূলত একটি প্রোগ্রামেবল চিপসেট। এটির মধ্যে যেকোনো অপারেটর তথা গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক সহ যেকোনো নেটওয়ার্কের সিম ব্যবহার করা যাবে। এটির সাইজ 6mm x 5mm.

আরও পড়ুন- ই-সিম কিভাবে ক্রয় করতে হবে ও ই-সিম ব্যবহার করার নিয়ম

সেবার দিক থেকেও সিম দুই (২) প্রকার হয়ে থাকে। যথা-

১. প্রিপ্রেইড সিম কার্ডঃ- প্রিপ্রেইড সিম হলো টেলিকম কোম্পানির এরকম একটি পরিষেবা যা ব্যবহার করার পূর্বে আপনাকে অর্থ প্রদান করতে হবে। এটি কিছুটা সস্তা ও ব্যবহার সুবিধাজনক হওয়ায় আমাদের ব্যবহৃত অধিকাংশ সিম-ই প্রিডেপ্রইড সিমের অর্ন্তভুক্ত।

২. পোস্ট-পেইড সিম কার্ডঃ- পোস্ট-পেইড সিম কার্ডের জন্য প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনমতো একটি প্যাকেজ সিলেক্ট করে নিতে হবে। তারপর প্রতি মাসে আপনি যে পরিমাণ পরিষেবা নিবেন বা খরচ করবেন মাস শেষে কোম্পানিকে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে। এই ধরনের সিম ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন- ওয়াইফাই কি? ওয়াইফাই কিভাবে কাজ করে?

সিম কার্ড কিভাবে কাজ করে?

মোবাইলে SIM কার্ড প্রবেশ করানোর পর মোবাইলটি চালু করা হলে তখনই সিম থেকে (IMSI) ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবসক্রাইবার চালু হয় এবং এটি নেটওয়ার্কে রিল করে এবং এক্সেস পাবার জন্য নেটওয়ার্কের কাছে অনুরোধ পাঠায়।

নেটওয়ার্ক তখন সেই IMSI কে গ্রহণ করে এবং অ্যথন্টিকেশন কী প্রদান করার জন্য নিজস্ব ডাটাবেজ চেক করে। নেটওয়ার্ক এবার র‌্যন্ডম বা এলোমেলোভাবে নম্বার উৎপাদন করে। মনে করুন, নম্বরটি A. এই নম্বরটি অ্যথন্টিকেশন কী এর সাথে সাইন (Sign) করে আরও একটি নতুন নম্বর উৎপাদন করে। মনে করুন সেটি B. এবার নেটওয়ার্ক আপনার নম্বরটিকে পাঠিয়ে দিবে আপনার সিমের বৈধতা যাচাই করার জন্য।

আপনার মোবাইলফোন নেটওয়ার্কের কাছ থেকে সেই নম্বরটি গ্রহণ করে এবং সেটি সিমের কাছে পৌছিয়ে দেয়। এই নম্বরটির সাথে অ্যথন্টিকেশন কী যুক্ত করা থাকে এবং এটি সিমে পৌছে আরেকটি নতুন নম্বর উৎপাদন করে তথা- C এবং এটিকেও পুনরায় নেটওয়ার্কের কাছে পোৗছিয়ে দেয়।

এখন যদি নেটওয়াক, নম্বর A সিম কার্ড থেকে আসা নম্বর C এর সাথে মিলে যায় তবেই নেটওয়ার্ক আপনার সিমকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এবং সিমটির এক্সেস গ্র্যান্টেড হবে। অন্যথায় এটি কাজ করবে না।

প্রতিটি সিমে একটি অদ্বিতীয় আইডেন্টিফায়ার থাকে, যাকে (ICCID) ইন্টাগ্রেটেড সার্কিট কার্ড আইডেন্টিফায়ার বলা হয়। এই আইডেন্টিফায়ারটি কার্ডে সংরক্ষিত রাখা হয়। ICCID তে তিন টি নম্বর ধারণ করা থাকে। যথা- () একটি আইডিন্টফাইং নম্বর SIM কার্ড ইস্যুকারীর জন্য। () দ্বিতীয় আইডিন্টফাইং নম্বর একাউন্ট তথ্যের জন্য এবং () তৃতীয় নম্বরটি প্রথম ও দ্বিতীয় নম্বরকে এক্সট্রা সিকিউরিটি দেবার জন্য কাজ করে।

আরও পড়ুন- ঔষধ ছাড়া স্বাস্থ্য ভাল রাখার ২০টি কার্যকরী উপায়

শেষ কথাঃ- প্রিয় পাঠক, আশা করছি SIM কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং এটি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। যেহেতু আমাদের যোগাযোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অন্যতম একটি মাধ্যম এই সিম। তাই এটি ব্যবহারেও সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।

SIM কার্ডের সচেতনার জন্য সিম রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। আপনার ব্যবহৃত সিমটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কিংবা আপনার নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত কোনো সিম আপনার অজান্তে অন্য কেউ ব্যবহার করছে কি না সেটি জানা আবশ্যক। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ার অনুরোধ রইলো- সিম কার্ড রেজিস্ট্রেশন চেক, মালিকানা পরিবর্তন

ইনফরমেটিভ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About MD. AL-AMIN

Check Also

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ ; যা নিত্যদিন ব্যবহারযোগ্য

আজকের আর্টিকেলে ১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ নিয়ে হাজির হয়েছি যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই ব্যবহার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *