Breaking News

গুগল এডসেন্স পাবার আগে এবং পরে | Before and After Getting AdSense

আমরা যারা ব্লগিং করি আমাদের অন্যতম একটাই উদ্দেশ্য যে, আমাদের তৈরি করা ব্লগ সাইট থেকে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা আয় করা। আমাদের দেশের প্রচুর মানুষ বর্তমানে ব্লগ সেক্টর এর সাথে জড়িত। ছাত্র থেকে শুরু করে কর্মজীবীরা পর্যন্ত এমনকি অনেক গৃহিণীও আছেন যারা ব্লগিং করে থাকেন। আমি বলব অবশ্যই এটি একটি ভাল দিক। কারণ প্রত্যেকের জীবনেই কিছু বাড়তি ইনকাম এর প্রয়োজন রয়েছে।

যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের কথা আলাদা। আর যারা চাকরি করেন তাদের জন্য বাড়তি আয়ের দরকার রয়েছে। আর এই আয়ের জন্যে গুগল এডসেন্স এর অনুমোদন অতীব জরুরি। এজন্য এডসেন্স এবং ব্লগার একে অন্যের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

বর্তমানে আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। আগে যারা ডায়েরি লিখতেন তারা এখন ব্লগ লিখছেন। ডায়েরির স্থান এখন ব্লগ দখল করে নিয়েছে। যারা নতুনভাবে ব্লগিং করতে চান তাদের মাঝে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, যেমন- গুগল এডসেন্স পাবার আগে কি করলে সহজে এডসেন্স পাওয়া যায় এবং এডসেন্স পাবার পরে কি করলে এডসেন্স একাউন্ট সুরক্ষিত থাকে? যারা এসকল প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছুক আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য। নিম্নে এই প্রসঙ্গে কিছু টিপস দেয়া হলো …

গুগল এডসেন্স পাবার আগেঃ-

গুগল এডসেন্স পাবার আগে কি করতে হবে? এই প্রশ্নটিই যারা নতুন ব্লগিং করে থাকেন তাদের মনের একান্ত প্রশ্ন। এডসেন্স পাবার আগে কি করতে হবে তা নিম্নে সীমিত আকারে বর্ণনা করা হলো….

১. ব্লগ শুরু করাঃ প্রথমে আপনাকে ব্লগিং শুরু করতে হবে। আপনি blogger.com এর মাধ্যমে ফ্রীতে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করতে পারেন। আর যারা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন তারা তো অবশ্যই বিষয়টি জানেন। একটি জিমেইল এর অধীনে blogger.com- এ সাইন ইন করে, ব্লগের নাম দিয়ে, ব্লগের এড্রেস লিখে ব্লগ লেখার ব্যাপারটি শুরু করতে হবে।

তাছাড়া যদি আপনি আরও এডভ্যান্স লেভেলের ব্লগিং করতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে, একটি ডোমেইন ক্রয় করে সেটি ব্লগারে সংযুক্ত করতে পারেন বা নিজে হোস্টিং কিনে সেটিতে আপনার ব্লগিং শুরু করতে পারেন।

আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার উপায়

২. টেমপ্লেট বা থিম নির্ধারণঃ টেমপ্লেট বা থিম হলো দোকানের শোকেস এর মত। শোকেস যত সাজানো থাকবে ততই ক্রেতাদের নজর কাড়বে। ঠিক তেমনি টেমপ্লেট দেখতে আকর্ষনীয় হলে আপনার সাইটের ভিজিটর ততোই আকৃষ্ট হবে। সুতরাং সুন্দর একটি টেমপ্লেট নির্বাচন করুন। আপনি ফ্রিতে অনেক টেমপ্লেট পাবেন কিন্তু প্রিমিয়াম টেমপ্লেট নেওয়া ভাল। কারণ এতে গুগল এডসেন্স পেতে সুবিধা হয়।

৩. পেজ এবং মেনু সেটিংঃ Contact page, About page, Privacy and policy page এবং Terms & Conditions এই চারটি পেজ অবশ্যই আপনার ব্লগে থাকতে হবে। কারণ এটি যে আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ব্লগ সেটি গুগলকে বুঝাতে হবে। আর এটি এডসেন্স পাবার জন্য খুবই সহায়ক। তারপর মেইন মেনু, ফুটার মেনু, সোসিয়াল আইকন এগুলো সুন্দরভাবে অপটিমাইজ করুন ।

৪. পোস্ট শুরু করুনঃ এরপর আপনার পছন্দের বিষয়ের উপর পোস্ট বা আর্টিকেল লিখতে থাকুন। অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, এডসেন্স পাবার জন্য কতগুলো পোস্ট করতে হবে? মিনিমাম ২০টি পোস্ট করুন। তবে পোস্ট গুলো অবশ্যই ৬০০-১০০০ শব্দের হতে হবে। তবে, বড় পোস্ট লিখতে গিয়ে আর্টিকেলে অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। আর্টিকেলগুলো অবশ্যই গুছিয়ে, সুন্দরভাবে ও সহজ ভাষায় ‍লিখার চেষ্টা করবেন।

আপনার ব্লগের পোস্টগুলো আপনার মনের মত অর্থাৎ নিজের মত করে লিখবেন। কোন প্রকার কপি পেস্ট করবেন না। যদি করেন তাহলে গুগল সেটা ধরে ফেলবে এবং পরে আপনার এডসেন্স পেতে অসুবিধা হবে। তাই কপিরাইটমুক্ত আর্টিকেল লিখুন। ইউনিক আর্টিকেল লিখুন।

৫. কাস্টম ডোমেইনঃ ডোমেইন দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল সাবডোমেইন, যেমন- yourname.blogspot.com. আর অন্যটি হলো টপ লেভেল ডোমেইন/ কাস্টম ডোমেইন, যেমন yourname.com. আপনার যদি সাবডোমেইন হয়ে থাকে তবে সেটি টপ লেভেল ডোমেইনের ট্রানস্ফার করুন। এতে এডসেন্স পেতে সুবিধা হবে। যেটি সম্পর্কে পূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে। তবে, আপনার বাজেটের সংকট থাকলে সাবডোমেইনে কাজ করতে পারেন।

আরও পড়ুন- মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার সহজ কিছু উপায়

৬. সার্চ কনসোলের ব্যবহারঃ আপনার সাইটের ডোমেইনটি এবার সার্চ কনসোল-এ সাবমিট করে আপনার সাইটটি ভেরিফাই করে নিন। এরপর সার্চ ককনসোল-এ একটি সাইট ম্যাপ সাবমিট করুন। এরপর আপনার লেখা আর্টিকেল/ পোস্টগুলো ওপেন করে এর ইউ আর এল গুলো ইনডেক্স করার জন্য সাবমিট করুন। এডসেন্স পাবার জন্য কিছু পোস্ট ইন্ডেক্স করা অতিব জরুরি। আপনার পোস্টগুলো ইনডেক্স হলে আপনি অর্গানিক ভিজিটর পাবেন।

৭. ডেসস্ক্রিপশন লিখুনঃ ব্লগারের সেটিংসে গিয়ে ডেসক্রিপশন লিখুন। ডেসক্রিপশন যেন ভাল এবং ইউনিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। এরপর একে একে ল্যাঙ্গুয়েজ, মেটা ট্যাগ ডেসস্ক্রিপশন, রোবট টি এক্স টি, কাস্টম রোবট হেডার ট্যাগ এনাবেল করে দিন। এগুলো যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি ইউটিউবের আশ্রয় নিতে পারেন। এ ব্যাপারে ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। সেগুলো দেখে নিলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন।

৮. সময়ঃ অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ব্লগ তৈরির কতদিন পর গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে? মিনিমাম এক থেকে দেড় মাস পর আবেদন করুন তাহলে সেটা বেটার হবে। এই এক-দেড় মাসের মধ্যে আপনার সাইটটি খুব ভালভাবে সাজিয়ে নিন। যেন কোন প্রকার সমস্যা না থাকে। তাহলে গুগল আপনার সাইটটিকে দ্রুত মনিটাইজেশন দিবে।

গুগল এডসেন্স পাবার পরেঃ-

মনে করুন, আপনি এডসেন্স পেয়েছেন। এবার আপনার মনে প্রশ্ন যে, কিভাবে আপনার এডসেন্স সুরক্ষিত রাখবেন? তাহলে চলুন জেনে নেই এডসেন্স এর জন্য কি কি সর্তকতা আপনাকে অবলম্বন করতে হবেঃ-

১. গুগল এডসেন্স এর নিয়ম অনুযায়ী আপনি নিজের সাইটের বিজ্ঞাপনে কখনো নিজে ক্লিক করতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে আপনার এডসেন্স-টি বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২. ভিজিটর বা পাঠককে কখনোই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য জোর বা বাধ্য করা যাবে না। অনেকেই ক্লিক হেয়ার অথবা কোন একটি হেডিং দিয়ে সেই বিষয়ে না লিখে শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এটা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত একটি কাজ। এমন কাজ মোটেও করবেন না। সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার এডসেন্স ও ওয়েবসাইট সবই হারাতে হবে।

আরও পড়ুন- ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার সেরা কয়েকটি টিপস

৩. গুগল এডসেন্স সাপোর্ট করেনা এমন কোনো ভাষা এডসেন্স সাইটে ব্যবহার করা যাবে না।

৪. পোস্ট এর মাঝখানে বা কনটেন্ট এর মাঝখানে বিজ্ঞাপণ বসানো উচিত নয়। এতে করে ভিজিটর কোনটা বিজ্ঞাপণ আর কোনটা কনটেন্ট তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে। সেই সাথে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করবেন না। এতে বিজ্ঞাপণে অতিরিক্ত ক্লিক পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫. কোন ছবির নিচে অথবা ছবির সাথে মিশিয়ে কোন বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করা যাবে না।

৬. আপনি বিজ্ঞাপণ তৈরি করার পর যে কোডটুকু আপনাকে দেয়া হবে তা কখনোই পরিবর্তন করতে পারবেন না।

৭. সাইটে বা পোস্টে খুব বেশি বিজ্ঞাপণ বসাবেন না। এমন যাতে না হয় যে, সাইটে মূল উপাদানের থেকে বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। তাহলে সাইটটি বিজ্ঞাপণের সাইট বলে পরিচিত হবে এবং ভিজিটর সেই সাইটে ভিজিট করবে না বা ভিজিট করতে বিরক্ত মনে করবে।

৮. যে পেজে এডসেন্স এর বিজ্ঞাপণ রয়েছে সেই পেজে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা থার্ড পার্টি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণ ব্যবহার করা যাবে না।

৯. আপনি যে সাইটে এডসেন্স এর বিজ্ঞাপণ বসাতে ইচ্ছুক সেটা যেন অবশ্যই কপিরাইটমুক্ত হয়। অর্থাৎ আপনার সাইটে কোন অংশ যাতে অন্য কোনো সাইটের কপি বা নকল না হয়। অন্যথায় আপনার এডসেন্স একাউন্ট বাতিল হওয়ার আশঙ্কা আছে।

১০. আপনার এডসেন্স এর কোড অন্য কাউকে দিবেন না। যদি দেন তাহলে আপনার এডসেন্স একাউন্টটি বাতিল হয়ে যাবে।

বন্ধুরা, মোটামুটি সীমিত আকারে আপনাদের গুগল এডসেন্স পাবার আগে ও পরে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করলাম। এর থেকেও বেশি জানতে হলে আপনাকে গুগলের এডসেন্স এর নীতিমালা পড়তে হবে। এডসেন্স পাবার আগে ব্লগ সাইটের সেটিং গুলো যদি বুঝতে না পারেন তাহলে ইউটিউব দেখে নিতে পারেন।

কোসো কারনে এডসেন্স যদি বাতিল হয় তাহলে কি কারণে বাতিল হলো সেটি নির্ধারণ করে রিভিউ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে গুগলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রিয় পাঠক, আশা করছি গুগল এডসেন্স পাবার আগে এবং পরে কি করনীয় তা বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেলটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

গুগল এডসেন্স ভেরিফাই করার সঠিক নিয়ম

গুগল এডসেন্স ভেরিফাই করার সঠিক নিয়ম | Google Adsence Verify System

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করা যায় এটি হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু টাকা আয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *