Breaking News

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার সহজ উপায় ২০২২

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় সম্পর্কে অনেকেই অনেক রকম প্রশ্ন করে থাকেন। বিশেষ করে ব্লগ অথবা ইউটিউব থেকে যারা আয় করতে ইচ্ছুক, আমরা এডসেন্স নিয়ে অনেক কিছুই জানতে চাই। আজ আমি এই ছোট্ট আর্টিকেলে সব প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আমার জানা মতে, গুগল এডসেন্স থেকে অনেকেই অনেক ভাল উপার্জন করছে। বিদেশীদের কথা না হয় বাদই দিলাম, এই দেশে অথবা এই উপমহাদেশে এমন অনেক ইউটিউবার ও ব্লগার রয়েছেন, যাদের মাসিক আয় কয়েক লক্ষ টাকা।

আমি আমার পরিচিত এক বড় ভাই এর কথা ‍উল্লেখ করছি। তিনি প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা আয় করেন তা অন্যন্য সাধারণ কর্মজীবীর এক বছরের ইনকামের চেয়েও অনেক বেশি। এমনকি তিনি বর্তমানে যা ইনকাম করেছেন তার উপর ভিত্তি করে তাহার পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম অনায়েশে তাদের জীবন চালিয়ে দিতে পারবেন।

তবে, আমি কোনোরকম লোভনীয় কথা বলতে চাইনি। শুধুমাত্র নিজের জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মতো টাকা উপার্জন করতে পারলেই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে এবং অনেকে এই আশায় গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখে থাকেন।

আমার মনে হয়, আমাদের দেশের যে কেউ বেকার থাকার চেয়েও প্রতি মাসে পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা ইনকাম করতে পারলেও হেসে খেলে তার জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে পারবে। কিন্তু, শুধু ব্লগ অথবা ইউটিউব চ্যানেল বানালে তো হবে না, এডসেন্স থেকে টাকা ইনকামের জন্য এডসেন্সের কিছু নিয়ম আছে। সকল নিয়ম যথাযতভাবে পূরণ করা হলেই কেবল গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করা যাবে। আসুন তাহলে গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কিছু জরুরি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

গুগল এডসেন্স কি?

গুগল এডসেন্স হচ্ছে গুগলের এমন একটা সার্ভিস যার মাধ্যমে এডভেটাইজ করা হয়। একটু সহজ করে বলি, আপনি নিশ্চয় বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব ভিডিওতে কিছু বিজ্ঞাপন দেখেছেন। এই বিজ্ঞাপনগুলো মূলত গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

কেউ যখন এই বিজ্ঞাপন গুলোতে ক্লিক করে বিজ্ঞাপন দাতার সাইটে ভিজিট করেন, এর বিনিময়ে বিজ্ঞাপন দাতা গুগল-কে নির্দিষ্ট একটি টাকা দিয়ে থাকেন। সেই টাকা থেকে সামান্য কিছু গুগল রেখে দেয়। বাকি টাকা ব্লগ অথবা ইউটিউব ভিডিও এর এডমিন বা মালিক-কে দিয়ে দেন।

সুতারং বিজ্ঞাপনে যত বেশি ক্লিক পড়বে ব্লগ অথবা ইউটিউব ভিডিওর মালিকের এডসেন্স অ্যাকাউন্টে তত বেশি টাকা জমা হতে থাকবে। সর্বোচ্চ ১০০ ডলার জমা হলে গুগল এডসেন্স টাকাটা ব্লগ বা ভিডিওর মালিকের ব্যাংকের একাউন্টে জমা করে দেন বা পাঠিয়ে দেন। ব্লগ বা ইউটিউব থেকে ইনকামের এটাই সবচেয়ে বড় এবং বহুল ব্যাবহৃত উপায়।

আরও পড়ুন- গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় | গুগল এডসেন্স একাউন্ট

গুগল এডওয়ার্ড কি?

গুগল এডওয়ার্ড হচ্ছে গুগলের আরও একটি পপুলার সার্ভিস। গুগল এডওয়ার্ডের মাধ্যমে গুগল বিভিন্ন প্রোডাক্ট কোম্পানী, ওয়েবসাইট বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের প্রোডাক্ট বা ওয়েবসাইট প্রচার করার জন্য চুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা নেয়। অতঃপর গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব ভিডিওতে সেই এড বা প্রচারনা দিয়ে দেয়।

গুগল এডসেন্সের এড সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। প্রথমত- বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট বা ইউটিউব ভিডিওতে ব্যানার প্রদর্শন করায়। দ্বিতীয়ত- ইউটিউব ভিডিওতে টেলিভিশনের এডভেটাইজের মত ভিডিও প্রদর্শন করিয়ে।

এখান থেকে গুগল যত টাকা আয় করবে তার ৬৮% ব্লগ, ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউব চ্যানেলের মালিক পাবে, বাকি ৩২% গুগল তাদের সার্ভিস খরছ হিসেবে রেখে দেয়। বলা যায়, এডসেন্স আর এডওয়ার্ড ওরা দুই মিলেই এক কাজে লিপ্ত।

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে কি কি লাগবে?

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে চাইলে, প্রথমত- আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ অথবা ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের কাজ জানেন তাহলে তো ভাল কথা। আর যদি না জানেন তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে একটি ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ সাইট বানিয়ে নিতে পারেন।

ওয়েবসাইট বানানোর জন্য একটি ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে সেটাকে অনলাইন করতে হবে। অতঃপর ওয়েবসাইট স্পিড বাড়াতে হবে। ওয়েবসাইটের উন্নত SEO করতে হবে। কিছু সংখ্যক আর্টিকেল লিখতে হবে। অন্য ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট চুরি করে কপি পেষ্ট যাবে না। মানুষের কাজে আসে এমন আর্টিকেল শুদ্ধ করে লিখতে হবে।

আপনার ওয়েবসাইটে সেই ওয়েবসাইট সম্পর্কিত পৃষ্ঠা অর্থাৎ About পেজ এবং Privacy Policy পেজ থাকতে হবে। ওয়েবসাইটে অন্য কারো এড থাকলে সেটা সরিয়ে নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটে যখন কিছু ভিজিটর ভিজিট করবে তখন গুগল এডসেন্সের একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এপ্লাই করতে পারেন। আপনার একটি মেইল আইডি থাকলে সহজে এডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

আর আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এডসেন্স থেকে ইনকাম করতে চান, তাহলে আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। কিছু সংখ্যক শিক্ষনীয় অর্থাৎ মানুষের উপকার হয় এমন ভিডিও বানিয়ে সেখানে আপলোড করতে হবে। কমপক্ষে এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং সর্বশেষ ৩৬৫ দিন বা এক বছরের মধ্যে ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচটাইম থাকতে হবে। অতঃপর চ্যানেলটাকে গুগল এডসেন্সের সাথে সংযোগ করতে হবে বা মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে হবে।

আরও পড়ুন- ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার সেরা কয়েকটি টিপস

অনেকেই বলে, এডসেন্স পাওয়া খুবই কঠিন। আমি বলব- পৃথিবীতে সহজ বলে কিছুই নেই। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এডসেন্স অবশ্যই পাবেন। একবার এডসেন্স পেলে সেটাকে রক্ষা করার জন্য তাদের নিয়ম-নীতি গুলো মেনে চলতে হবে। এডসেন্স সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেতে Google AdSense Help Community পড়তে পারেন।

মোট কতটি পোষ্ট থাকলে এডসেন্স পাওয়া যাবে?

আমার মতে যত বেশি ইউনিক পোষ্ট থাকবে তত সহজে এডসেন্স পাওয়া যাবে। তবে সর্বনিম্ন ২০ টির অধিক পোষ্ট থাকতে হবে। কেউ বলে আরও বেশি পোস্ট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, আপনি নিয়মিত পোষ্ট লিখুন এবং এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে থাকুন। শুধু খেয়াল রাখবেন লেখার শব্দগুলো যেন শুদ্ধ হয়। কারণ এই লেখা ইংরেজীতে অনুবাদ হতে পারে। অনুবাদ হবার পরে শব্দে ভুল থাকলে উল্টা-পাল্টা রেজাল্ট আসবে। তখন হিতে বিপরীত হওয়াটা স্বাভাবিক।

একটি আর্টিকেল সর্বনিম্ন কত শব্দের হতে হবে?

আমার মতে ৫০০ শব্দের বেশি হলে ভাল হয়। কেউ বলে কমপক্ষে ১০০০ শব্দ হতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, আর্টিকেল যখন লিখবেন- তখন একটু সহজ করে লিখলে ক্ষতি কি! ছোট্ট একটি কবিতা লিখতে গেলেও পাঁচশত এর বেশি শব্দ ব্যবহার করতে হয়। আর আপনি দুই চার লাইন লিখলে সেটাতো আর আর্টিকেল হয় না।

তাছাড়া একটি পেজে দুই চার লাইন লিখে বাকি পেজ খালি রেখে দিলে পেজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। মানুষের উপকারে আসে এমন কিছু লেখা লিখুন যাতে মানুষ সেটা ধৈর্য সহকারে পড়ে। এমন হলে এডসেন্স পেতে আপনার বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

আরও পড়ুন- গুগল এডসেন্স পাবার আগে এবং পরে যা করণীয়

কি কি বিষয় নিয়ে লেখা উচিত?

আমার মতে, লেখার জন্য নির্দিষ্ট কোন বিষয় থাকে না। আপনি যদি ব্লগ লিখেন তাহলে যে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন। আমার এই ওয়েবসাইট ব্লগ সাইট নয়, তবুও প্রয়োজনীয় অনেক লেখা আমি এখানে লিখেছি এবং আগামীতে আরও অনেক বিষয় নিয়ে লেখার পরিকল্পনা আছে। লেখার ক্ষেত্রে আমি বলব, মানুষ কেমন লেখা পড়তে চাই। অথবা কি পড়লে পড়াটা তার কাজে আসবে বলে আপনি মনে করেন, তাদের জন্য আপনি সেরকম কিছু লেখা লিখুন।

এডসেন্সের জন্য কিভাবে এপ্লাই করব?

প্রথমে উপরোক্ত নিয়মগুলো মানতে হবে। অতঃপর Google Adsense এর হোম পেইজে গিয়ে উপরের ডান দিকে Sign in বাটনে ক্লিক করে ই-মেইল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করে নিবেন। এক্ষেত্রে অবশ্য আপনি যে ই-মেইল এর মাধ্যমে এডসেন্স অ্যাকাউন্টটি খুলবেন সেই ই-মেইল দিয়ে লগ-ইন করতে হবে। তারপর পরবর্তী ধাপে আপনি অন্যন্য তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্টটি খুলতে পারনে।

তারপর মাঝে মাঝে ই-মেইল চেক করবেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে আপনার ই-মেইল এ রিপ্লাই পেয়ে যাবেন। আর কোনো সমস্য থাকলে সেটাও গুগল আপনাকে জানিয়ে দিবে। তাদের ই-মেইল পেলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে প্রতিটি বিষয় ভাল করে বুঝে নিয়ে কাজ করতে থাকুন। আশা করি ফলাফল ভাল হবে।

আরও পড়ুন- ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার সেরা উপায়

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা কিভাবে পাব?

এডসেন্স ভিন্ন ভিন্ন দেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে টাকা প্রদান করে। বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে থাকে। আপনার এডসেন্স অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ১০ ডলার ইনকাম হলে গুগল আপনার নিকট ৬ সংখ্যার একটি পিন নম্বর পাঠাবে। এডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনি যেই এড্রেস দিবেন, সেই এড্রেসে চিঠির মাধ্যেমে পাঠাবে। চিঠিটি বা পিনটি পেতে ৭ থেকে ১ মাস আ কার চেয়ে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

টেনশন নেবার কিছু নেই এবং এখানে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। পিনটি পাবার পর এডসেন্স অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই করতে হবে। তারপর সেটিতে আপনার বা যার নামে এডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলা তাহার নামের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে হবে। সবশেষে আপনার এডসেন্স অ্যাকাউন্টে যখন কমপক্ষে ১০০ ডলার ইনকাম হবে তখন সেটি গুগল আপনার দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিবে।

১০০ ডলার ইনকাম হবার পর পরবর্তী মাসের ২১-২৩ তারিখের মধ্যে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পর গুগল আপনার এডসেন্স অ্যাকিউন্টের ই-মেইলে জানিয়ে দিবে। সবশেষে টাকাটি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতে ২ থেকে ৭ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আমাদের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন কেউ বিদেশ অথবা দূর থেকে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ও জমা হবার যেই পদ্ধতি গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার পর সেটিও একই পদ্ধতিতে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। টাকা জমা হওয়া নিয়ে আপনাকে কোনোরকম চিন্তা করতে হবে না। তবে, অবশ্যই যার নামে এডসেন্স তাহার নামের ব্যাংক অ্যকাউন্ট যুক্ত করার চেষ্টা করবেন।

বন্ধুরা, আশা করছি গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার উপায় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। যদি আপনি গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করতে আগ্রহী থাকেন তাহলে এই ব্যাসিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় জানার প্রয়োজন হবে। আমরা চেষ্টা করব পরবর্তী কোনো পোস্টে বিস্তারিত প্রকাশ করার জন্য।

পোস্টটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভাল থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

গুগল এডসেন্স ভেরিফাই করার সঠিক নিয়ম

গুগল এডসেন্স ভেরিফাই করার সঠিক নিয়ম | Google Adsence Verify System

গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করা যায় এটি হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু টাকা আয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *