Breaking News

কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া | Bondhu24

কোরবানি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনমূলক ইবাদত। আল্লাহর প্রতি তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করাই কোরবানি। কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া, পদ্ধতিসহ আজকের আর্টিকেলে উল্লেখ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) কতৃক তার পুত্র ইসামাঈল (আ.) কে আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য কোরবানি করার স্মৃতিকে অনুসরণ করেই আমরা প্রতিবছর কোরবানি করে থাকি। এটি সকল ‍মুসলিমের ওপর আবশ্যক নয় তবে, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তা আদায় করতে হবে।

কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম সম্পর্কে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অনেকেই এসকল নিয়ম না জানার কারণে অন্যের মাধ্যমে কোরবানির পশু জবেহ করে থাকে। অথচ, নিজের কোরবানির পশু নিজে জবেহ করা মুস্তাহাব।

তবে, নিজে জবেহ করতে সক্ষম না হলে অন্যের দ্বারা জবেহ করিয়ে নিতে কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে পশু জবেহ করার সময় কোরবানি দাতাকে সামনে উপস্থিত থাকা উত্তম।

এমনকি যে জবেহ করবে তাকে তাহার পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায়, কোরবানি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাহলে চলুন কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া আর্টিকেলটির মূল বিষয়বস্তু শুরু করা যাক।

আরও পড়ুন- কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মঃ-

কোরবানিকে সঠিকভাবে আদায় করার জন্য প্রথমেই সঠিক পশু বাছাই করতে হবে। পশু বাছাই করার ক্ষেত্রে নিচের শর্তসমূহের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কোরবানির পশুর বয়স কত হবে?

যে পশুকে কোরবানি দেওয়া হবে তা কিরকম হবে ও তার বয়স কতটুকু হতে হবে ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এই ব্যাপারেও সঠিক নির্দেশনা রয়েছে।

  • উটঃ কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। সর্বোচ্চ শরীক ৭ জন।
  • গরু, মহিষঃ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। সর্বোচ্চ শরীক ৭ জন।
  • ছাগল, ভেড়া, দুম্বাঃ কমপক্ষে ১ বছর বয়সের হতে হবে। সর্বোচ্চ শরীক ১ জন।

তবে, কোনো পশুর বয়স যদি পরিপূর্ণ না হয় কিন্তু পশুটিকে দেখতে পরিপূর্ণ বয়সের পশুর সমান মনে হয় তাহলে সেটি দ্বারাও কোরবানি আদায় করা যাবে। ‍কিন্তু কোরবানির পশুটি অবশ্যই দোষমুক্ত হতে হবে।

আরও পড়ুন- অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা

কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়াঃ-

কোরবানির পশু জবেহ করারও সঠিক নিয়ম ও কতিপয় দোয়া রয়েছে। পশু জবেহ করার পূর্বে কিছু দোয়া ও পরে কিছু দোয়া পাঠ করতে হয়। নিচে কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়াসমূহ উল্লেখ করা হলো-

১. প্রথেমে পশু জবেহ করার জন্য ভাল ও ধারালো একটি ছুরি বা চাকু ব্যবহার করতে হবে। যাতে জবেহ করার সময় অতি দ্রুত পশুটিকে জবেহ করা যায় এবং পশুটিও কষ্ট কম পায়। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’’পশু জবেহ করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালভাবে ধার দিয়ে নেয়া।’’ (মুসলিম)

২. কোরবানি করার সময় পশুকে কিবলামুখী করে ও বাম কাতে শোয়াতে হবে। সে সময় পশুর পাগুলো পশ্চিম দিকে থাকবে, মাথা বা সামনের দিকটি দক্ষিণ প্রান্তে ও লেজ বা পিছনের অংশটি উত্তর প্রান্তে রাখতে হবে।

৩. পশু জবেহ করার সময় (‘بِسْمِ الله) বিসমিল্লাহ’ বলে জবেহ করা। অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বলেই ছুরি চালানো শুরু করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবেহ করা যাবে না। এমকি যার পক্ষ থেকে কুরবানি আদায় করা হচ্ছে এখানে তাহার নামও উল্লেখ করা যাবে না।

এক্ষেত্রে জবাইকারী ব্যাক্তি যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ উচ্চারণ না করেন তাতে কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ উচ্চারণ না করিলে জবাইকৃত পশু ভক্ষণ করা হারাম বলে গণ্য হবে।

৪. পশু জবেহ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুই পাশে থাকা দুটি নালী বা শাহ রগ কেটে দেয়া। এ নালীগুলে কাটা হয়ে গেলেই পশু জবেহ বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

তবে, খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী কাটার পর একটি শাহ রগ কাটা হলেও চলবে। কিন্তু, দুটি শাহ রগ কেটে দিতে পারলে পশুর শেষ নিঃস্বাস দ্রুত শেষ হয়। এক্ষেত্রে, অনেকে জবেহ করার পর অন্য একটি ছুরি বা চাকু ব্যবহার করে পশুর গলাই বা জবাই এর স্থানে আঘাত করেন। এরকম করা মোটেই উচিত নয়।

কোরবানির পশু জবেহ করার দোয়াঃ-

কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য পশুটিকে শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কোরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কোরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে।

১. দোয়াটি হলো-

اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ

উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।

২. যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন-
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

৩. নিজের পশু নিজে কোরবানি করলে পশু জবেহ করার পর এ দোয়া পড়বেন-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

৪. অন্য কেউ কোরবানি বা অন্য কারো কোরবানির করলে এ দোয়া পড়বেন-
اَللهُمَّ تَقَبَّلْ لَهُ مِنِكَ-مِنْكُمْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مَحَمّدٍ وَّ خَلِيْلِكِ اِبْرَاهِيْم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিনকা-মিনকুম’ কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিম।

উল্লেখ্য, যদি কেউ একাকি কোরবানি দেয় এবং নিজে জবেহ করে তবে বলবে মিন্নি। আর অন্যের কোরবানির পশু জবেহ করার সময় ‘মিনকা-মিনকুম’ বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।

৫. একটি পশুর সামনে অন্য পশু জবেহ না করা। পশুর সামনে ছুরি-চাকুতে ধার না দেওয়া। এতে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল।

আরও পড়ুন- ঈদের নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা

শেষ কথাঃ- প্রিয় পাঠক, কোরবানির পশু জবেহ করার সময় উপরোক্ত দোয়াসমূহ পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে, পাঠ করা উত্তম। আপনার জন্য কষ্টকর হলে, আপনি বাংলাতেও এসকল দোয়াসমূহ পাঠ করতে পারেন।

কিন্তু পশু জবেহ করার সময় অবশ্যই ’’বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’’ বলতে হবে। এটি পাঠ করা বাধ্যতামূলক এবং অন্যান্য দোয়া পাঠ করা বাধ্যতামূলক নয় বরং উত্তম।

’’কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া’’ আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে আমাদের জানাতে পারেন। ভাল লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের নিকট শেয়ার করে তাদেরকেও জানার ‍সুযোগ করে দিবেন।

’’কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া’’ সম্পর্কে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে আমাদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

বিয়ে করার উপকারিতা

অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে

বিয়ের সঠিক বয়স কত? এবং অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা বা কি কি ক্ষতির সম্ভাবনা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *