Breaking News

BCS ক্যাডার কোন পদে কতটুকু সুবিধা ও অসুুবিধা জেনে নিন

BCS ক্যাডার পদে আবেদন করার সময় প্রার্থীগণ চয়েস নির্ধারণ করতে অনেক হীনমন্নতায় ভুগেন। নতুন অবস্থায় অনেকেই বুঝতে পারেন না কোন BCS ক্যাডার পদ প্রথমে রাখবেন আর কেনই বা রাখা উচিত।

বাংলাদেশ BSC ক্যাডারে মোট ২৭টি পদ রয়েছে। যেহেতু প্রত্যেকের চাহিদা, রুচিবোধ, ইচ্ছা সম্পূর্ণ ভিন্ন, তাই পছন্দক্রমও ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন BCS ক্যাডারে কতটুকু সুবিধা বা অসুবিধা রয়েছে সেটি জানার পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি যেই পদ-কে প্রথম চয়েস হিসেবে সিলেক্ট করবেন সেই পদ সম্পর্কেও আপনার পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি। কেননা ক্যাডার পদ চয়েস অনুযায়ী ভাইভা বোর্ডে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারে।

মনে করুন, আপনি প্রথম চয়েস হিসেবে পররাষ্ট্র ক্যাডার পদ সিলেক্ট করলেন। তাহলে ভাইভা বোর্ডে আপনাকে পররাষ্ট্র বা কূটনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই আপনার যেই ক্যাডার পদে যেতে ইচ্ছুক বা যেই ক্যাডার পদ সম্পর্কে আপনার সবচেয়ে বেশি পড়াশুনা রয়েছে সেই ক্যাডার পদ-কেই প্রথম চয়েসে রাখা উত্তম।

BSC পরীক্ষার মূল ধাপ ৩টি। যথা-

  • MCQ পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের।
  • লিখিত পরীক্ষা হবে ৯০০ নম্বরের।
  • এবং ভাইভা পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীগণ লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীগণ ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। ভাইভা পরীক্ষায় পাশ নম্বরও শতকরা ৫০ ভাগ। লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে একটি মেধাতালিকা প্রকাশিত হবে ক্যাডার বণ্টনের জন্য।

অনেকেই রয়েছেন যারা BCS ক্যাডার চয়েস লিস্ট সম্পর্কে অবগত নন। বিশেষ করে যারা প্রথমবার BCS পরীক্ষার জন্য আবেদন করবেন আপনারা BCS ক্যাডার কোন পদে কতটুকু সুবিধা ও অসুুবিধা, কাজের ধরণ ইত্যাদি বিষয়াবলি জেনে নিবেন। সেক্ষেত্রে পছন্দক্রম সিলেক্ট করতে অনেকটা সহজ হবে।

▷ নিচে ২৭টি BCS ক্যাডারের নাম ও ক্যাডারের ধরণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলোঃ-

২৭টি BCS ক্যাডারের নাম ও ধরণ (BCS Cader List)

ক্রমিক নংক্যাডারের নামক্যাডারের ধরণ
01বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন)সাধারণ ক্যাডার
02বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
03বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার)সাধারণ ক্যাডার
04বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিরীক্ষা ও হিসাব)সাধারণ ক্যাডার
05বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়)সাধারণ ক্যাডার
06বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি)সাধারণ ক্যাডার
07বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকনমিক)সাধারণ ক্যাডার
08বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা)সাধারণ ক্যাডার
09বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (মৎস্য)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
10বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (খাদ্য)সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
11বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র)সাধারণ ক্যাডার
12বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বন)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
13বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সাধারণ শিক্ষা)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
14বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
15বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (তথ্য)সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
16বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পশু সম্পদ)সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
17বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ)সাধারণ ক্যাডার
18বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ডাক)সাধারণ ক্যাডার
19বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
20বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (গণপূর্ত)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
21বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে প্রকৌশল)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
22বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক)সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
23বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সড়ক ও জনপথ)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
24বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিসংখ্যান)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
25বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর)সাধারণ ক্যাডার
26বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কারিগরি শিক্ষা)কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার
27বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বাণিজ্য)সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার

BCS-এ অংশ নেয়া সকল প্রার্থীদের (ক্যাডার পদ চয়েস এর) পছন্দক্রম এর উপর একটি গবেষণা করা হয়েছিল। উক্ত গবেষণায় প্রাপ্ত পছন্দক্রম তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-

BCS ক্যাডার সেরা পদ (BCS Cader Best Choice)

(১) পররাষ্ট্র    () পুলিশ    () প্রশাসন

() শুল্ক ও আবগারি    () কর    () নিরীক্ষা ও হিসাব

() বাণিজ্য    () খাদ্য    () রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক

(১০) আনসার     (১১) তথ্য     (১২) ডাক

(১৩) সমবায়     ও (১৪) পরিবার পরিকল্পনা।

আরও পড়ুন- অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে আমাদের কিছু ভুল ধারনা

BCS ক্যাডার পদের সুবিধা ও অসুুবিধা সমূহঃ-

BCS ক্যাডার কোনো পদ-কেই সম্পূর্ণভাবে ভাল কিংবা মন্দ বলা যাবে না। প্রতিটি পদেই ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আপনার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা ও চাহিদার সাথে সমন্বয় করে আপনাকে BCS ক্যাডারের পদটি নির্বাচন করতে হবে। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করতে নিচে কিছু ক্যাডার পদের সুবিধা ও অসুবিধার দিক সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

1. BCS পররাষ্ট্রঃ-

BCS পররাষ্ট্র

বাংলাদেশের সবচেয়ে আকাঙ্খাতি পদ হচ্ছে এই BCS পররাষ্ট্র পদটি। প্রায় ৯০ ভাগ প্রার্থীগণ তাদের চয়েস লিস্টে এই পদ-টিকে প্রথমে রাখেন। এই পদে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আপনি যদি একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই পদটি আপনার জন্য সর্বসেরা একটি পদ। পাশাপাশি আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই পদে।

মন্ত্রণালয়ে পদক্রমঃ সহকারী সচিব > সিনিয়র সহকারী সচিব > পরিচালক > মহাপরিচালক > অতিরিক্ত সচিব > সচিব।

দূতাবাসে পদক্রমঃ Third Sectetary > Second Sectetary > First Sectetary > Councilor > Minnister > Ambassador / High Commissioner.

BCS পররাষ্ট্র ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • প্রথমত আপনাকে দূতাবাসে পদায়ন করা হলে দেশের নিয়মতি স্যলারির পাশাপাশি অতিরিক্ত ১২০০ ডলার মাসিক ভাতা দেওয়া হবে। সেই সাথে প্রতিমাসে ৩০০ ডলার বিনোদন ভাতা সহ প্রতি বছর ২০,০০০ ডলার দেওয়া হবে বাসা ভাড়া হিসেবে। এছাড়াও দুইটি সন্তানের সম্পূর্ণ পড়াশুনার খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের মোট ৯০ ভাগ চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করবে।
  • বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় ট্যাক্স ব্যাতীত গাড়ি কিনতে পারবেন। তবে, সেই গাড়ি দেশে আনতে চাইলে অবশ্যই ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।
  • দেশ কিংবা বিদেশে সরকারি খরচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। এমনকি আপনার থাকা খাওয়া সম্পূর্ণ খরচ সরকারিভাবে বহন করা হবে।
  • বিদেশে যেকোনো অনুষ্ঠানে আপনি নিজে এবং আপনার পরিবারের সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন সেই সাথে কূটনীতিক মর্যাদা লাভ করবেন।
  • BCS পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রতিনিধি কম থাকায় নিশ্চিতভাবে রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত প্রমোশন পেয়ে যেতে পারেন।
  • BCS পররাষ্ট্র ক্যাডারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই পদে কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাপ থাকবে না। ফলে স্বাধীন ও নিশ্চিন্তভাবে আপনার কাজ করতে পারবেন।

একজন ফরেন ক্যাডারের বক্তব্য এরকম ছিল যে, ফরেন ক্যাডার এমন একটি পদ, যাদের ওয়ালেট ফাঁকা থাকা অবস্থায় তারা সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়াতে পারেন।

BCS পররাষ্ট্র ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

  • চাকরির প্রথম পর্যায়ে আপনাকে সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যোগদান করতে হবে। তখন সকল কাজই প্রশিক্ষণমূলক হিসেবে করতে হবে। সহকারী সচিব হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে টাইপিং থেকে শুরু করে সকল প্রকার দাপ্তরিক কাজ করতে হবে। এসময় চাকরির প্রতি অনীহা চলে আসার সম্ভাবনা থাকে।
  • এমনকি চাকরির প্রথম পর্যায়ে আপনাকে কোনো গাড়ি দেওয়া হবে না। তখন গণমাইক্রোবাসে করে আফিস করতে হবে।
  • চাকরির ৬ বছরের মধ্যে ২টি দেশে পোস্টিং দেওয়া হবে। ৬ বছর পর অভিজ্ঞতা অর্জন ও দক্ষ হতে ৩ বছর ঢাকায় পোস্টিং দেওয়া হবে। এর কারণে এক জায়গায় বেশিদিন থাকার সুযোগ পাবেন না।

সর্বোপরি পররাষ্ট্র ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধার তুলনায় অসুবিধা সমূহ তেমন কোনো সমস্যার মধ্যে পড়ে না। দেশ-বিদেশে রাজকীয়ভাবে জীবন-যাপন করা, নিজের পরিবারের জন্য এতো সব সুবিধা অন্য কোনো BCS ক্যাডার পদে পাওয়া যাবে না। আশা করছি যদি আপনার BCS হবার স্বপ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই এই পদ-কে প্রথম চয়েসে রাখবেন।

2. BCS পুলিশঃ-

নিজের ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় নিরাপত্তার। পুলিশ মূলত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকে। সেই সাথে নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদেরও নিরাপত্তা দিতে পারে। এমনকি মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত পুলিশের বিস্তৃতি বিদ্যমান থাকে। অন্য কোনো BCS ক্যাডার পদে এই সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না।

BCS পুলিশ ক্যাডারে চাকরি হলে আপনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ASP (অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেন্ডেট অফ পুলিশ) হিসেবে জয়েন করবেন। সেখান থেকে এক বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে পাঠানো হবে। এরপর আপনার পোস্টিং হবে জেলা পুলিশে। সেখানে ASP হিসেবে কাজ করবেন।

জেলায় পদক্রমঃ সহকারী পুলিশ সুপার > সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার > অতিরিক্ত পুলিশ সুপার > পুলিশ সুপার > অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক > উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক > অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক > মহাপুলিশ পরিদর্শক।

মেট্রোপলিটানে পদক্রমঃ সহকারী পুলিশ কমিশনার > সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার > অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার > উপ-পুলিশ কমিশনার > যুগ্ম পুলিশ কমিশনার > অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার > পুলিশ কমিশনার।

BCS পুলিশ ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • একজন পুলিশ ক্যাডার নিজের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনকে যতটা সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে, অন্য কোনো BCS ক্যাডার সেটা করতে পারে না। যেকোনো ধরনের সমস্যাই হোক না কেনো, একজন পুলিশ ক্যাডার সব জায়গাতেই সম্মান পাবার যোগ্য।
  • চাকরির প্রথম পর্যায়ে বডিগার্ড. বাংলো, ভাতা, গাড়ি সহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য সরকারি খরচে দেশ কিংবা বিদেশে যেতে পারবেন। এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষার প্রতিটি মিশনে ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানি পেতে পারেন।
  • সাধারণ পুলিশ পদে কাজ করতে ইচ্ছুক না থাকলে স্পেশাল ফোর্স, এসএসএফ, গোয়েন্দা, র‌্যাব সহ আরও অন্যান্য ফোর্স গুলোতে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
  • সামাজিক অনুষ্ঠানে অন্যদের তুলনায় সম্মান, খ্যাতি অনেক বেশি পাবেন ও দেশের পরিকল্পনা গুলো মাঠে থেকে নিজে বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন।

BCS পুলিশ ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

  • BCS পুলিশ ক্যাডারে ডিউটির নির্দিষ্ট কোনো সময়-সীমা নির্ধারণ থাকে না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি রত অবস্থায় থাকা লাগে। যদি কখনও রাত ২ টার সময় কল আসে, তখনই বিছানা ছেড়ে ডিউটিতে জয়েন করতে হয়।
  • বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ ক্যাডারের ইমেজ অনেক খারাপ। সাধারণ জনগণের নিকট পুলিশ মানেই ঘুষখোর। যদিও বিষয়টি পুরোপুরিভাবে সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
  • পুলিশ ক্যাডার পদে রাজনৈতিক চাপ অনেক বেশি। এই চাকরিতে সৎ পথে থাকা অনেক কষ্টকর।

আরও পড়ুন- পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

3. BCS প্রশাসন বা এডমিনঃ-

BCS প্রশাসন বা এডমিন ক্যাডারে চাকরি হলে আপনাকে মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করতে হবে। এই ক্যাডারদের প্রধান কাজ হলো অন্য সকল ক্যাডার অফিসারদের কাজের সমন্বয় করা। তাছাড়া সরকারি সকল ধরনের প্রশাসনিক কাজ, প্রতিবাদ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, সকল ক্যাডারের সমন্বয়ে এই কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকেন BCS প্রশাসন বা এডমিন ক্যাডারগণ।

সচিবালয়ে পোস্টিং হলে সরকারের ৫টি সচিবালয়ে (বাংলাদেশ সচিবালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়, নির্বাচন সচিবালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়) সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করবেন। সাধারণত আমলা বলতে আমরা মূলত এসকল এডমিন ক্যাডারীকেই বুঝে থাকি।

পূর্বে পুলিশের উপর প্রশাসন ক্যাডারদের কিছু কতৃত্ব ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিচার ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্টের অধীনে চলে যাওয়ায় প্রশাসন ক্যাডারদের জৌলস কমে গেছে। তাই বর্তমানে এই পদের স্থান তৃতীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে।

মাঠ পর্যায়ে পদক্রমঃ সহকারী কমিশনার > সিনিয়র সহকারী সচিব/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক > জেলা প্রশাসক > অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার > বিভাগীয় কমিশনার।

সচিবালয়ে পদক্রমঃ সহকারী সচিব > সিনিয়র সহকারী সচিব > উপসচিব > যুগ্ম-সচিব > অতিরিক্ত সচিব > সচিব।

BCS প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • প্রশাসন ক্যাডারদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ নিয়োগ হয় সচিবালয়ে। তাই আপনি প্রশাসন ক্যাডার হতে পারলে সচিবালয়ে পদোন্নতি হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
  • এমনকি যদি আপনি অল্প বয়সে প্রশাসন ক্যাডার চাকরিতে জয়েন হতে পারেন তাহলে ক্যাবিনেট সচিব পর্যন্ত হতে পারবেন। ক্যাবিনেট সচিব-এর মর্যাদা একজন সংসদ সদস্যের চেয়েও বেশি।
  • প্রয়োজনে বিদেশে ভ্রমণ সহ কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এমনকি সরকারি খরচে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন ও প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
  • স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার ক্ষমতা পেয়ে যাবেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাংলোর সুবিধা তো রয়েছেই।

BCS প্রশাসন ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

  • BCS প্রশাসন ক্যাডারদের উপর রাজনৈতিক চাপ অনেক বেশি থাকে। কর্মক্ষেত্রে নিজ স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ অনেকটাই কম থাকে। এই ক্যাডার পদে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে। তাই এই পদে সৎ থাকা অনেকটাই কষ্টকর হয়।
  • এই ক্যডার পদে পদোন্নতি অনেকটা ধীরগতি হয়ে থাকে। কেননা অন্যান্য ক্যাডার হতে অনেকেই সচিবালয়ে আসার উদ্দেশ্যে এই পদে চলে আসেন।
  • তাছাড়া, এই পদে কাজের বৈচিত্র‌্যতা অনেক বেশি এবং অধিক পরিমাণে ট্রান্সফারও হতে হবে। ফলে পরিবার নিয়ে এক জায়গায় বেশি দিন বসবাস করার সুযোগ হয়ে উঠে না।

4. BCS শুল্ক ও আবগারি বা কাস্টমসঃ-

অনেক BCS প্রার্থীগণ শুল্ক ও আবগারি পদ-কে প্রথম চয়েসে রাখেন। এই বিভাগে কোনো ঝামেলা বিহীন নিজ ইচ্ছায় নিরিবিলি পরিবেশে শান্তি মতো কাজ করা যায়। চাকরির শুরুতে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সহকারি কমিশনার (কাস্টমস) পদে জয়েন করতে হবে।

পদক্রমঃ সহকারী কাস্টমস কমিশনার > উপ-কাস্টমস কমিশনার > যুগ্ম-কাস্টমস কমিশনার > অতিরিক্ত কাস্টমস কমিশনার > কাস্টমস কমিশনার > জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য।

BCS শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • চাকরির প্রথম পর্যায়েই আপনাকে যাতায়াত করার জন্য গাড়ি দেওয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন শিল্পপতিদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সমাজের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রন পাবেন এবং বিভিন্ন ধনী ব্যবসায়ীদের সাথে ওঠা-বসা করার সুযোগ থাকবে।
  • এই পদে বৈধ উপায়ে টাকা আয় করার প্রচুর সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কোনো ধরনের চোরাচালান ধরে দিতে পারলে সরকার থেকে আপনাকে সম্মানিমূলক ভাবে ১০-৪০% পর্যন্ত পুরুষ্কার দেওয়া হবে।
  • সাধারণ চাকরি করতে ভাল না লাগলে শুল্ক গোয়েন্দা হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পাবেন।

BCS শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

  • BCS কাস্টমস পদ-টি দুর্নীতির জন্য ‍অনেক বেশি সমালোচিত একটি বিভাগ। দুর্নীতি করার জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকে এই বিভাগে। কিন্তু নিজে সৎ থাকতে পারলে বৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন ও চাকরি করা যায়।
  • পদোন্নতি বা প্রমোশন অতিরিক্ত কমিশনার পর্যন্ত অনেকটাই ভাল। কিন্তু অনেকেই এক পর্যায়ে সচিবালয়ে চাকরির উদ্দেশ্যে প্রশাসন ক্যাডার পদ ছেড়ে চলে যান।

5. BCS করঃ-

আয়কর বিভাগের ক্যাডারগণ অর্থমন্ত্রনালয়ের অধীনে NRB (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এর একটি শাখাতে কাজ করে থাকেন। সরকারি সকল ধরনের প্রত্যক্ষ কর এই বিভাগে নেওয়া হয়ে থাকে। BCS কর ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য।

BCS কর ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • কর ফাঁকিবাজদের ধরতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ভাল পরিমাণ টাকা পুরুষ্কার হিসেবে পাবার সুযোগ থাকে।
  • চাকরির প্রথম পর্যায়ে বেশ ভাল পদোন্নতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু চাকরির মাঝপথে পদোন্নতি কিছুটা অস্থবির হয়ে যায়। কারণ প্রশাসন ক্যাডার থেকে অনেকেই এই বিভাগের উর্ধ্বস্থানীয় পদে আসতে চান।
  • সারা বছর খুব বেশি একটা কাজের চাপ নেই বললেই চলে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত।
  • দেরী করে চাকরিতে জয়েন হলে BCS কর ক্যাডারে আসা অনেক বেশি লাভজনক।

BCS কর ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

  • প্রথমদিকে এই চাকরিতে ভাল সুযোগ-সুবিধা থাকে তবে, উপরের কাস্টমস ক্যাডার থেকে তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম।
  • সারা বছর কাজের কোনো চাপ না থাকলেও ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময় কাজের অনেক চাপ সৃষ্টি হয়। তখন রাত ১০-১২ টা পর্যন্তও কাজ করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • এই ক্যাডারে যতই পদোন্নতি হোক না কেনো কখনও রাজস্ব বোর্ডের প্রধান হওয়া যায় না। কেননা রাজস্ব বোর্ডের প্রধান নিযুক্ত করা হয় প্রশাসন ক্যাডার হতে।

আরও পড়ুন- কম্পিউটার কিবোর্ড শর্টকাট ও এর ব্যবহার

6. BCS নিরীক্ষা ও হিসাব বা অডিটঃ-

সরকারি যত আয় এবং ব্যয় হয়ে থাকে, তার হিসাব ও নিরীক্ষা করে থাকেন এই অডিট ক্যাডারগণ। এই বিভাগটি অনেক সম্মান জনক। অন্যান্য সকল BCS ক্যাডারগণ অডিট ক্যাডারদের সমীহ করে চলেন।

এর কারণ হলো সরকারি প্রত্যেকটি বিভাগেই খরচ ও আয়ের হিসাবে কিছুটা এদিক সেদিক হয়ে থাকে। আর এই ভুলগুলো ধরে থাকেন অডিট ক্যাডারগণ। তাই অন্য সকল BCS ক্যাডারগণ কিছুটা হলেও অডিট ক্যাডারদের ভয় পেয়ে থাকেন। দেশের সরকারি প্রতিটি বিভাগের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন এই অডিট ক্যাডারগণ।

পদক্রমঃ সহকারী হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক > উপ-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক > উপ-হিসাব নিরীক্ষক > অতিরিক্ত হিসাব ও নিয়ন্ত্রক > হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক > মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক।

BCS নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

  • সরকারি খরচে বিদেশে ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন এবং সরকারি খরচে বিভিন্ন প্রশিক্ষণও গ্রহণ করতে পারবেন।
  • পুলিশ ক্যাডারদের মতো সম্মান দেওয়া হবে এই বিভাগের সকল BCS ক্যাডারদের।
  • চাকরিতে তেমন কোনো চাপ থাকবে না। নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন এবং সৎ ও বৈধ উপায়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
  • সর্বোপরি চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্ত হলেও বিভিন্ন কোম্পানি আপনার নিকট অডিট করার জন্য অফার করতে আসতে থাকবে।

BCS নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

অন্যান্য বিভাগের ন্যায় এই বিভাগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। চাকরিতে থাকা অবস্থায় আপনার নিকট বেশ কিছু ‍দুর্নীতির অফার আসতে পারে। অনেকটা নাটক-সিনেমার মতো, একটি পেপারে সাইন করলেই দেওয়া হবে ১০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। তবে, নিজে সৎ থাকতে পারলে এগুলো কোনো সমস্যায় ফেলতে পারবে না।

7. BCS খাদ্যঃ-

আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম উপাদান হলো খাদ্য। এই খাদ্যের উৎপাদন, বিপণন, বিতরণ নিশ্চিত করে থাকেন খাদ্য বিভাগের ক্যাডারগণ। চাকরির প্রথম পর্যায়ে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে মন্ত্রনালয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে। তারপর পদায়ন করা হবে খাদ্য অধিদপ্তরে। সর্বশেষ ওখান থেকে জেলা পর্যায়ে কাজ করতে পারবেন।

BCS খাদ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

চাকরিতে তেমন কোনো চাপ নেই। কোনো ধরনের ঝামেলা বিহীন অনায়েশেই কাজ করতে পারবেন। যারা কৃষক প্রেমী রয়েছেন আপনাদের জন্য এটি অনেক বেশি সহজ হবে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করতে পারেবেন এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো সহজেই বুঝতে পারবেন।

BCS খাদ্য ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

এই বিভাগে চাকরির শুরুতে আপনাকে কোনো গাড়ি দেওয়া হবে না। ক্ষমতা দেখানোর মতোও তেমন কোনো সুযোগ পাবেন না। এমনকি অন্যান্য বিভাগের ন্যায় অতিরিক্ত কোনো আর্থিক পুরুষ্কারও পাবার কোনো সুযোগ নেই।

8. BCS বাণিজ্যঃ-

BCS বাণিজ্য

বাণিজ্য ক্যাডারদের কাজ হচ্ছে দেশের আমদানি ও রপ্তানির সাম্যবস্থা দেখা। চাকরির শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সহকারী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ে অথবা বিভাগীয় শহরে পোস্টিং করা হবে।

BCS বাণিজ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

এই চাকরিতে কাজের তেমন কোনো চাপ নেই। কাজের সুবিধার্তে যাতায়াতের জন্য গাড়ি দেওয়া হবে। এই ক্যাডার পদে পদোন্নতির মান ভাল ও দ্রুত প্রমোশন পাওয়া যায়। বিদেশে ভ্রমণেরও সুযোগ পাবেন। এমনকি বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে আপনাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।

BCS বাণিজ্য ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

এই চাকরিতে অন্যান্য পদের তুলনায় সম্মান অনেক কম। সেই সাথে অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য ক্যাডারের সাথে প্রশাসন ক্যাডারের একীভূত হবার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন- ই-সিম কিভাবে ক্রয় করতে হবে ও ই-সিম ব্যবহার করার নিয়ম

9. BCS আনসারঃ-

এই বিভাগে চাকরি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুলিশের মতো নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পড়ে ডিউটি করতে হবে। চাকরির প্রথম পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরের অধীনে সহকারী জেলা এডজুটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। আনসার ক্যাডারগণ পুলিশের মতো আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে না। তাদের কাজ হচ্ছে কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করা।

পদক্রমঃ সহকারী জেলা এ্যাডজুটেন্ট > জেলা এ্যাডজুটেন্ট > উপ-পরিচালক > উপ-মহাপরিচালক > মহাপরিচালক।

BCS আনসার ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

আনসার BCS ক্যাডারে চাকরির শুরুতেই পাওয়া যায় বাড়ি, গাড়ি ও বডিগার্ড এর সুযোগ-সুবিধা। একজন পুলিশ ক্যাডারের জন্য যেসকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে; একজন আনসার BCS ক্যাডারও একই রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। পদোন্নতির অবস্থাও বেশ ভাল। সবকিছু ঠিক থাকলে মহাপরিচালক পর্যন্ত হওয়া যায়। এমনকি বিদেশের মিশনে কাজ করার জন্যও সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

BCS আনসার ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

অনেক BCS ক্যাডারগণ এই বিভাগে আসতে চান না। এর কারণ হলো এই বিভাগে মহাপরিচালক হবার সুযোগ থাকলেও প্রতিরক্ষা বিভাগের অধীনে কাজ করতে হয়। তাছাড়া এই পদে পুলিশের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকলেও ক্ষমতা দেখানোর মতো কোনো সুযোগ পাওয়া যায় না।

10. BCS তথ্যঃ-

BCS তথ্য

একজন BCS তথ্য ক্যাডারের কাজ হচ্ছে সরকারি কাজের তথ্য-উপাত্ত সাংবাদিকদের নিকট পৌছে দেওয়া। চাকরির প্রথম পর্যায়ে সহকারি পরিচালক বা সমমানের পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। BCS তথ্য ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

পদক্রমঃ সহকারী পরিচালক/জেলা তথ্য অফিসার/গবেষণা কর্মকর্তা > উপ-পরিচালক > পরিচালক > অতিরিক্ত মহাপরিচালক/অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা < মহাপরিচালক/প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

বার্তা বিভাগের পদক্রমঃ সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক > উপ বার্তা নিয়ন্ত্রক > আঞ্চলিক বার্তা নিয়ন্ত্রক > বার্তা নিয়ন্ত্রক > প্রধান উপ-মহাপরিচালক (বার্তা)

প্রকৌশল বিভাগের পদক্রমঃ সহকারী বেতার প্রকৌশলী > উপ-আঞ্চলিক প্রকৌশলী > আঞ্চলিক প্রকৌশলী > সিনিয়র প্রকৌশলী > অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী > প্রধান প্রকৌশলী পরিচালক।

বেতার পদক্রমঃ সহকারী পরিচালক > উপ-পরিচালক > উপ-আঞ্চলিক পরিচালক > আঞ্চলিক পরিচালক > পরিচালক > উপ-মহাপরিচালক > মহাপরিচালক।

কলেজ পদক্রমঃ প্রভাষক > সহকারী অধ্যাপক > সহযোগী অধ্যাপক > অধ্যাপক।

অধিদপ্তরে পদক্রমঃ শিক্ষা কর্মকর্তা > সহকারী পরিচালক > উপ-পরিচালক > পরিচালক > অতিরিক্ত মহাপরিচালক > মহাপরিচালক।

BCS তথ্য ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

এই চাকরিতে কাজের তেমন কোনো চাপ নেই। এমনকি রাজনৈতিক কোনো চাপও প্রভাব ফেলবে না। যেহেতু সাংবাদিকদের নিকট তথ্য পৌছানো প্রধান কাজ তাই সহজেই মিডিয়ার সাথে পরিচিতি গড়ে উঠে ও নিজের পরিচিতি বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

BCS তথ্য ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

কাজের ধরন ও পরিধি অনুযায়ী এই পদের সম্মান ও ক্ষমতা অনেকটাই কম। এমনকি একই ধরনের কাজ হওয়াতে কাজের প্রতি একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। তবে, যদি আপনি মিডিয়ার সাথে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন বা মিডিয়ার নিকট থাকতে পছন্দ করে থাকেন তাহলে, এই পদটি চয়েস লিস্টে রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন- বিশ্বের সব দেশের নাম, রাজধানী এবং মুদ্রার নাম

11. BCS ডাকঃ-

ডাক বিভাগের সকল ধরনের কাজের দায়িত্বে থাকেন এই BCS ক্যাডারগণ। ডাক বিভাগে সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এই বিভাগে সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে মহাপরিচালক। সরকারি চিঠিপত্র আদান-প্রদান থেকে শুরু করে মানি অর্ডার, ব্যক্তিগত চিঠি, ডাক বিভাগের সঞ্চয়ী হিসাব সহ অন্যান্য সকল প্রকার দাপ্তরিক কাজগুলোর তত্বাবধায়ক হিসেবে BCS ডাক ক্যাডারগণ কাজ করে থাকেন।

BCS ডাক ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

BCS ডাক ক্যাডারে কাজের তেমন কোনো চাপ থাকে না। প্রয়োজন অনুসারে পর্যাপ্ত ছুটি পাবেন। এমনকি এই বিভাগে ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে প্রশাসন ক্যাডারে যাবার সুযোগ থাকে।

BCS ডাক ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

অন্যান্য বিভাগের ন্যায় এই বিভাগেও কিছু অসুবিধা রয়েছে। এই বিভাগে পদোন্নতির পরিমাণ খুবই অল্প। এমনকি ক্ষমতা, সম্মান খুব বেশি একটা নেই বললেই চলে।

12. BCS সমবায়ঃ-

BCS সমবায় ক্যাডারদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সমবায় সমিতির লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে বার্ষিক অডিট পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী নিবন্ধক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। পরবর্তীতে জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে পোস্টিং করা হয়ে থাকে।

BCS সমবায় ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

BCS সমবায় ক্যাডার বিভাগে কাজের তেমন কোনো চাপ থাকে না। এমনকি রাজনৈতিক চাপ থেকেও মুক্ত থাকা যায়। চাকরির শেষের দিকে প্রশাসন ক্যাডারে উপসচিব হবার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যায়।

BCS সমবায় ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

এই ক্যাডার পদে আপনাকে কোনো গাড়ি দেওয়া হবে না। এমনকি কোনো ধরনের প্রভাব প্রতিপত্তিও থাকবে না।

13. BCS রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিকঃ-

রেলওয়ে পরিবহণ, উন্নয়ন, রেলওয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা BCS রেলওয়ে ও বাণিজ্যিক ক্যাডারদের প্রধান কাজ। চাকরির প্রথম পর্যায়ে সহকারী ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং এই ক্যাডারে সর্বোচ্চ পদ হচ্ছে মহাপরিচালক।

BCS রেলওয়ে ও বাণিজ্যিক ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

রেলওয়ে ও বাণিজ্যিক ক্যাডার পদেও ডাক ক্যাডারদের ন্যায় কাজের তেমন কোনো চাপ থাকে না। প্রয়োজনীয় সকল ছুটি পাবেন এবং সর্বোপরি ১৮ বা ২০ বছর পর প্রশাসন ক্যাডারে যাবার সুযোগ পাবেন।

BCS রেলওয়ে ও বাণিজ্যিক ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

এই ক্যাডার পদে অন্যান্য কিছু বিভাগের মতো পদোন্নতি থাকলেও সেটি অনেক ধীরগতির। পদোন্নতির মাধ্যমে মহাপরিচালক পদে যাবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। কেননা মহাপরিচালক পদে কারিগরি ক্যাডার থেকে অনেকেই নিয়োগ হয়ে থাকে। তাছাড়া সম্মান ও ক্ষমতার দিক থেকে এই ক্যাডার অনেক পিছনে।

আরও পড়ুন- সহজ উপায়ে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড বের করার নিয়ম

14. BCS পরিবার পরিকল্পনাঃ-

পরিবার পরিকল্পনার জন্য সরকারি সকল ধরনের প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ করা হয় এই BCS ক্যাডার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাধ্যমে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বা বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এই ক্যাডারদের পোস্টিং হয়ে থাকে।

BCS পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা সমূহঃ-

এই কাজেও তেমন কোনো চাপ থাকে না। প্রকল্পগুলো নিজেই বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া এই কাজে ভাল না লাগলে আপনি প্রশাসন ক্যাডারে যাবার সুযোগ পাবেন।

BCS পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের অসুবিধা সমূহঃ-

চাকরিতে আপনার পোস্টিং উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে যেকোনো সেক্টরেই হোক না কেনো আপনাকে প্রশাসন ক্যাডারের অধীনেই কাজ করতে হবে। অথবা উপজেলো স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অধীনে কাজ করতে হবে। অনেক সময় এরকম হয় যে, জুনিয়র প্রশাসন ক্যাডারের অধীনেও কাজ করতে হয়।

আরও পড়ুন- ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার সেরা উপায়

শেষ কথাঃ- প্রিয় পাঠক, ”BCS ক্যাডার পদের সুবিধা ও অসুুবিধা” সম্পর্কে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ! আশা করছি BCS ক্যাডার সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।

BCS ক্যাডার সহযোগী হিসেবে BCS Live MCQ Exam BCS Prostuti অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি অন্যান্য যেকোনো চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করতে এই অ্যাপটি অনেক বেশি সহায়ক হবে।

যদি BCS ক্যাডার সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাতে পারেন। আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী আমি উত্তর দেবার চেষ্টা করবো ইন-শা-আল্লাহ!

’’BCS ক্যাডার পদের সুবিধা ও অসুুবিধা’’ সম্পর্কিত ইনফরমেটিভ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ ; যা নিত্যদিন ব্যবহারযোগ্য

আজকের আর্টিকেলে ১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ নিয়ে হাজির হয়েছি যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই ব্যবহার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *