বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বিকাশ সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত একটি ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান তথা- নগদ, রকেট, উপায় এর তুলনায় বিকাশের সার্ভিস সহজ হওয়ায় এটির জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রাহক বিকাশের সাথে যুক্ত হতে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম জানার চেষ্টা করছে।
অনেকেই বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম না জানার কারণে অন্যের নিকট শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। এতে দোষের কিছু না থাকলেও আপনার সময় নষ্ট ও পার্সোনাল তথ্য সে জেনে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনি নিজেই আপনার বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারেন।
বর্তমান সময়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা অনেক সহজ। আপনি নিজেই ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। নিম্নে বিকাশ কি, বিকাশের সুবিধা, বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও বিকাশ ব্যবহার করার শর্তাবলি উল্লেখ করা হলো-
bkash / বিকাশ কি?
বিকাশ (bkash) হলো বর্তমান সময়ে সহজে ও অতি দ্রুত টাকা-পয়সা লেনদেন করার একটি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস। এটির মাধ্যমে একজন গ্রাহক যেকোনো প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেকোনো সময় টাকা লেনদেন করতে পারে। বিকাশের সেবার মধ্যে রয়েছে ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, টাকা ট্রান্সফার, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি পরিষেবা।
বিকাশ আমেরিকার মানি ইন মোশন এলএলসি এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগ হিসাবে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের কার্যক্রম আরও দ্রুত এগিয়ে যায়। ২০১৭ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন তাদের “চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড” তালিকার শীর্ষ ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিকাশকে ২৩ তম স্থানে রেখেছে।
এমনকি এশিয়ামানি পত্রিকা বিকাশকে ২০১৮ সালের সেরা ডিজিটাল ব্যাংক হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বিকাশ প্রথম স্থান অবস্থান করেছে।
➤ আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার উপায়
বিকাশ একাউন্টের ধরণঃ-
ব্যবহারকারীদের দিক থেকে বিকাশ একাউন্ট সাধারণত তিন (৩) ধরনের হয়ে থাকে। যথা- (১) পার্সোনাল, (২) এজেন্ট এবং (৩) মার্চেন্ট একাউন্ট। অপরদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লেনদেন সুবিধার জন্য বিকাশ পার্সোনাল রিটেইল একাউন্ট সেবাও চালু করা হয়েছে। যেটি পার্সোনাল একাউন্টের অন্তর্ভূক্ত।
তবে, আজকে আমরা শুধুমাত্র বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও একাউন্টের সুবিধা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
বিকাশ একাউন্টের সুবিধাসমূহঃ-
একজন সাধারণ গ্রাহক বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট থেকে অনেক ধরনের সুবিধা পেতে পারেন। যথা-
- ফ্রিতে একাউন্ট খোলার সুবিধা ও বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
- যেকোনো সময় নিজের একাউন্টে টাকা জমা (ক্যাশ-ইন) করতে পারবেন ও প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন (ক্যাশ-আউট) করতে পারবেন।
- যেকোনো অপারেটর সিম-এ মোবাইল রিচার্জ করতে পারবেন ও নম্বরে থাকা যেকোনো অফারও দেখতে পারবেন।
- ব্যাংক বা ব্যাংক কার্ড থেকে বিকাশ একাউন্টে টাকা এড করতে পারবেন এবং বিকাশ থেকে ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার বা জমা করতে পারবেন।
- অনলাইন কেনাকাটায় পেমেন্টসহ আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট।
- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেটসহ প্রাতিষ্ঠানিক আরও অন্যান্য ফি পেমেন্ট করতে পারবেন।
- আরও রয়েছে সেভিংস সুবিধা, রেমিটেন্স, টিকেট, ইন্সুরেন্স ইত্যাদি সুবিধা।
- সর্বশেষ যেকোনো প্রয়োজনে ফ্রিতে লাইভ চ্যাট করার সুবিধা ও হেল্পলাইন সাপোর্ট।
➤ আরও পড়ুন- ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার সেরা কয়েকটি টিপস
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মঃ-
নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলা এখন একদম সিম্পল! বর্তমানে সকল এয়ারটেল, বাংলালিংক, টেলিটক, গ্রামীণফোন এবং রবি গ্রাহকগণ বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন নিজের ফোন থেকেই! বর্তমানে সকল এয়ারটেল, বাংলালিংক, টেলিটক, গ্রামীণফোন এবং রবি গ্রাহকগণ বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন নিজের ফোন থেকেই! ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।
যদি আপনি এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে গুগল প্লে স্টোর থেকে এবং অ্যাপল ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে অ্যাপল স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন। আপনাদের সুবিধার্তে বিকাশ অ্যাপের অফিসিয়ালি লিংক সমূহ নিচে দেওয়া হলো-
অ্যাপ ডাউনলোড করার পর ওপেন করুন এবং বিকাশ একাউন্ট খুলতে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ-
- প্রথমেই কিছু পারমিশন চাওয়া হবে সেগুলো Allow অপশনে ক্লিক করুন।
- নতুন একাউন্ট খোলার জন্য লগ-ইন / রেজিষ্ট্রেশন করুন বাটনে ক্লিক করুন।
- তারপর আপনি যেই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেই নম্বরটি শূণ্য (0) থেকে শুরু করে বসিয়ে নিন এবং পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। (অবশ্যই নম্বরটি মোবাইলে সচল অবস্থায় থাকতে হবে।)
- প্রদত্ত মোবাইল নম্বরটি যেই অপারেটর-এর সেটি সিলেক্ট করে করুন এবং নম্বরটিতে ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে পারমিশন দিয়ে কনফার্ম করুন।
- বিকাশের সকল শর্তাবলি পড়ুন ও আমার সম্মতি আছে বাটনে ট্যাপ করুন। (সম্ভব হলে বিকাশের শর্তসমূহ পড়ে নিবেন।)
- এবার তিনটি সহজ ধাপ অনুসরণ করে বিকাশ একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে নিচ থেকে NID এর ছবি তুলুন বাটনে ক্লিক করুন।
- তারপর আপনার NID কার্ডের সামনের দিকের ছবি তুলুন ও সাবমিট করুন বাটনে ট্যাপ করুন।
- একইভাবে NID কার্ডের পিছনের দিকের ছবি তুলুন ও সাবমিট করুন বাটনে ট্যাপ করুন।
- তারপর আপনার প্রদত্ত NID কার্ডের সকল তথ্যাবলি দেখতে পারবেন কোনো তথ্য আপডেট করার প্রয়োজন হলে আপডেট করুন বা পরবর্তী বাটনে ট্যাপ করুন এবং অন্যান্য আরও কিছু তথ্য প্রদান করুন।
- এবার আপনার তথা যাহার NID কার্ড জমা করেছেন তাহার ইনস্ট্যান্ট একটি সেল্ফি তুলুন। (অবশ্যই ছবিট পর্যাপ্ত আলোতে তুলুন এবং স্পষ্টভাবে তুলুন।) তারপর নিশ্চিত করুন বাটনে ট্যাপ করুন।
- প্রসেসিং ও যাচাইকরণের জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করুন এবং সর্বশেষ আপনাকে কনফার্মেশন ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, আপনার বিকাশ একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়েছে। (বিশেষ ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।)
- একাউন্ট থেকে লেনদেন করার জন্য নতুন পিন সেট করুন বাটনে ক্লিক করুন বা ইউএসএসডি / USSD কোড *247# ডায়াল করতে পারেন।
- নতুন পিন সেট করুন পেজে পাঁচ (৫) সংখ্যার একটি পিন নস্বর বসিয়ে নিন এবং সেটি পুনরায় নিচের বক্সে বসিয়ে কনফার্ম করুন। (অবশ্যই পিন নম্বরটি মনে রাখতে হবে।)
এবার আপনার একাউন্ট খোলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একাউন্ট থেকে লেনদেন করার জন্য ইউএসএসডি / USSD কোড *247# ডায়াল করতে পারেন কিংবা বিকাশ অ্যাপে লগ-ইন করুন।
➤ আরও পড়ুন- নগদ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম দেখুন-
বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করার শর্তাবলিঃ-
বিকাশ তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য সাধারণ কিছু শর্ত প্রদান করেছে। নিম্নে কিছু শর্তাবলি উল্লেখ করা হলো-
- আপনি কেবল বাংলাদেশেই বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
- বিকাশ অ্যাপ এবং *247# আপনি দুইভাবে বিকাশ ব্যবহার করতে পারেন।
- বিকাশ অ্যাপ-এ এখন গেস্ট মোড রয়েছে। যাদের বিকাশ একাউন্ট নেই তারাও এর মাধ্যমে বিকাশ এর ফিচার, সার্ভিস ও অফারগুলো দেখতে পারবেন। কোনো লেনদেন করতে চাইলে আপনাকে লগ-ইন করতে হবে অথবা নতুন বিকাশ একাউন্ট খুলতে হবে।
- লেনদেন সংক্রান্ত সকল প্রকার দায়ভার নিজেকে বহন করতে হবে। কাজেই সর্বদা আপনার বিকাশ একাউন্টের কোড ও পিন নম্বর গোপন রাখতে হবে।
আরও পড়ুন- বিকাশে টাকা দেখার নিয়ম | How To Check Bkash Account Balance
➤ বিকাশ সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন- bkash
বন্ধুরা, আশা করছি বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও বিকাশের অন্যান্য বিষয়াবলি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা দিতে পেরেছি। পোস্টটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই
———– ধন্যবাদ! ———–