Breaking News

ঈদের নামাজের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা – Bondhu24

মুসলিমদের ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ ও ঈদের নামাজ আদায় করাকে আল্লাহ তায়ালা ওয়াজিব করেছেন। মুসলিমদের জন্য বছরের দুটি দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। যথা- রমজানের পর ঈদুল ফিতর বা রোযার ঈদ এবং জিলহজ মাসে আরাফা দিবসের পর ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ।

সকল মুসলিমগণ অনেক আনন্দতার সাথে এই ঈদ পালন করে থাকেন। যেহেতু বছরে মাত্র দুই বার এই ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়, তাই অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ম ভুলে যায়। ফলে ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন ও বিশুদ্ধভাবে ঈদের নামাজ আদায় করা সম্ভব হয় না।

আজকের আর্টিকেলে ঈদের নামাজের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। সকলকে ঈদের নামাজের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা আর্টিকেলে স্বাগতম জানিয়ে শুরু করছি।

আরও পড়ুন- কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত ও কুরবানির গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

ঈদের নামাজের বিধানঃ-

যাদের ওপর জুমুআর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব তাদের ওপর ঈদের নামাজও আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করুন ও কুরবানি করুন। (সূরাহ- কাউসার, আয়াতঃ ০২)

ঈদের নামাজ উন্মুক্ত স্থানে বা খোলা ময়দানে আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। যদি উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে। (বুখারি : ১/১৩১)

আরও পড়ুন- কুরআন শরীফের ১১৪ টি সূরার নাম বাংলা অর্থসহ

ঈদের নামাজের নিয়মঃ-

ঈদের নামাজের নিয়ম অন্যান্য স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। এই নামাজে কোনো আযান ও ইকামত নেই। তবে ইমামকে অনুসরণ করিয়া দুই রাকাত নামাজ অতিরিক্ত ছয় (৬) তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়। বিস্তারিত নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো-

১. প্রথমে স্বাভাবিক নামাজের মতো তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধতে হবে। তারপর ছানা পাঠ করবেন।

২. তারপর কেরাত পাঠ করার পূর্বেই অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।

৩. তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সাহেব সুরা ফাতিহা পড়বে এবং এর সঙ্গে অন্য একটি সূরাহ মেলাবেন।

৪. সূরাহ পাঠ করার পর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।

৫. দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত ওঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে সরাসরি রুকুতে চলে যাবেন।

৬. তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই সেজদা ও শেষ বৈঠক এর মাধ্যমে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।

৭. নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুৎবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুৎবা মনযোগ সহকারে শুনতে হবে। কেননা খুৎবা শুনা ওয়াজিব। খুৎবা পাঠ করা অবস্থায় কোনো কথা বলা বা অন্যকে কথা বলতে নিষেধ করা যাবে না।

৮. খুৎবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।

আরও পড়ুন- কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া

ঈদের নামাজের সুন্নত সমূহঃ-

১. অন্যান্য দিনের তুলনায় ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬)

২. সাধারণত যেকোনো সময়ই মিসওয়াক করা সুন্নত এমনকি ঈদের দিনও মেসওয়াক করা সুন্নত। (তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/৫৩৮)

৩. গোসল করা। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের দিনে গোসল করতেন। (মুসনাদে বায‍যার, হাদিস: ৩৮৮০) ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৬০৯)

৪. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের দিনে সুন্দরতম পোশাক পরিধান করতেন। (বায়হাকী : ১৯০১)

৫. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮)

৬. সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০)

৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টিজাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানির গোশত আহার করা উত্তম।

বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে কিছুই খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন। (আহমদ : ১৪২২)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর খেজুর খেতেন বি-জোড় সংখ্যায়। (বুখারী : ৯০০)

৮. ঈদুল ফিতরের ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকদেরকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। (বুখারী, হাদীস নং-১৪২১)

৯. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়ার চেষ্টা করা বা যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭)

১০. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের সুন্নত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (তিরমিযী : ১৮৭ )

১১. ঈদুল ফিতরের ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকাঃ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫)

১২. ঈদের নামাজ ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮)

১৩. যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। জাবির (রাযি.) বর্ণনা করে বলেন, ‘’ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাওয়া-আসার রাস্তায় পার্থক্য করতেন।’’ (বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬)

আরও পড়ুন- অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা

আরও পড়ুন- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম ২০২২

ঈদের নামাজের মাসয়ালাঃ-

মাসয়ালা ১: ঈদের নামাজের পূর্বে মহিলা হোক কিংবা পুরুষ, বাড়িতে, মসজিদে অথবা ঈদগাহে ইশরাক বা অন্য কোনো নফল নামাজ পড়া মাকরূহ। ঈদের জামাতের পরেও ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ। তবে, ঘরে ফিরে ইশরাক, চাশত ইত্যাদি নফল নামাজ পড়তে পারবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৯)

মাসয়ালা ২: সম্ভব হলে এলাকার সবাই একস্থানে একত্রে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। তবে কয়েক জায়গায় পড়াও জায়েজ।

মাসয়ালা ৩: ইমাম সাহেব জুমার মতো দুইটি খুৎবা দেবেন। তবে জুমার খুৎবা দেওয়া ফরজ আর ঈদের খুৎবা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদের খুৎবা শুনা ওয়াজিব। খুৎবা পাঠ করার সময় কথাবার্তা, চলাফেরা, টাকা উঠানো ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ। যদি পেছন থেকে খুৎবা শুনতে পাওয়া না যায় তবুও চুপচাপ বসে থাকতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৫৯)

খুৎবা চলাকালীন অবস্থায় যেকোনো ধরনের কথাবার্তা বলা নিষেধ। এমনকি খুৎবায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম উচ্চারিত হলে আওয়াজ করে রাসূল (সা.) এর ওপর দরূদ পাঠ করাও নিষেধ। তবে, কেউ মনে মনে পাঠ করতে পারবে। (মুসনাদে আহমদঃ ১০১৪০)

মাসয়ালা ৪: ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে তার কাযা আদায় করতে হবে না, যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশকিছু লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা যেকোনো একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন।

মাসয়ালা ৫: কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সালামের পর যখন ওই ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতের (প্রথম রাকাত) জন্য দাঁড়াবে তখন প্রথমে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা), তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে ফাতিহা ও কেরাতের পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। ফাতিহার আগে নয়।

মাসয়ালা ৬: ১ শাওয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরিয়তসম্মত কোনো কারণে ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে শাওয়ালের ২ তারিখে পড়ার অনুমতি আছে। এরপর আর নামাজ পড়া যাবে না।

আরও পড়ুন- জীবনের জন্য ক্ষতিকর কিছু কাজ

শেষ কথাঃ- ঈদকে উপলক্ষ করে আমাদের ‍মুসলিম সমাজে বিভিন্ন ধরনের গুনাহের কাজ প্রচলিত হয়ে থাকে। যেমন- বিভিন্ন গানের আয়োজন করা, হারাম পানীয় গ্রহণ করা, ছেলে-মেয়েদের একসাথে পার্টি করা ইত্যাদি।

ঈদকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য বরকতময় ও আনন্দময় করেছেন। এমনকি এই দুই ঈদের দিন দোয়া কবুলের দিন। আমাদের উচিত এসকল গুণাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম কল্যাণ কামনা করা। সবশেষে আরও একটি অনুরোধ, ঈদের মাসআলা সম্পর্কে যদি আপনার কোনো ভিন্নমত থাকে তাহলে আমাদের সাথে বা নিকটস্থ কোনো ধর্মীয় সেবক থেকে জেনে নিবেন।

বন্ধুরা, ’’ঈদের নামাজের নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ মাসআল‘’ আর্টিকেলটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

বিয়ে করার উপকারিতা

অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে

বিয়ের সঠিক বয়স কত? এবং অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা বা কি কি ক্ষতির সম্ভাবনা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *