Breaking News

রোযা ভঙ্গের কারণ, রোযার মাকরুহ ও যেসকল কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না

আজকে আমরা জানব রোযা ভঙ্গের কারণ, রোযার মাকরূহ এবং যেসকল কারণে রোযা ভঙ্গ হয়না সে-সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে। মহা উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র রমজান পালন করে থাকে বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহগণ। কিন্তু আমরা অনেকেই রোযা ভঙ্গের কারণ, রোযার মাকরূহ এবং যেসকল কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না এসকল বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখিনা। আসুন জেনে নেই রোযা ভঙ্গের কারণ, রোযার মাকরূহ এবং কি কি কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেন,
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থঃ- “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো“ (সূরা বাকারাহ-২:১৮৩)

আরও পড়ুন- ঔষধ ছাড়া স্বাস্থ্য ভাল রাখার ২০টি কার্যকরী উপায়

রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহঃ-

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরিফে রোযা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বলেন,

“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ করো। আর পানাহার করো যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে” [সূরা বাকারাহ- ২:১৮৭]

রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহ হলো-

১. ইচ্ছাকৃত কিছু খেলে বা পান করিলে।

২. স্ত্রী সহবাস করিলে, অথবা কামভাবে কাউকে স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে, অথবা হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে।

৩. রাত্রি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করিলে।

৪. মুখে পানি বা পান রেখে ঘুমালে এবং সে অবস্থায় সেহেরির সময় চলে গেলে।

৫. কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে। (অবশ্য রোযার কথা স্মরণ না থাকিলে রোযা ভাঙ্গবে না)।

৬. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করিলে, অথবা মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে।

৭. নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ঔষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।

৮. জবরদস্তি করে কেহ রোযা ভাঙ্গালে।

৯. ইনজেকশান বা স্যালাইনের মাধ্যমে দেহে ঔষধ পৌছালে।

১০. কংকর, পাথর বা ফলের বিচি/দানা গিলে ফেললে।

১১. দাঁতে আটকে থাকা ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।

১২. ধূমপান করা বা ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ধোয়া গ্রহন করিলে।

১৩. দাঁত হতে বেশি পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে তা ভিতরে চলে গেলে।

১৪. সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।

১৫. পুরো রমজান মাস রোযার নিয়ত না করিলে।

আর যদি রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাস-আলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামগন থেকে জেনে নিবেন আশা করছি।

আরও পড়ুন- জীবনের জন্য ক্ষতিকর কিছু কাজ

রোযার মাকরুহঃ-

১. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছু চিবালে।

২. মাজন, কয়লা, গুল বা পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে।

৩. রাতে ফরজ হওয়া গোসলসহ সারাদিন অতিবাহিত করিলে। অথবা, সাড়া দিন নাপাক অবস্থায় থাকা। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ।

৪. রোযা অবস্থায় রক্তদান করিলে।

৫. পরনিন্দা, কুৎসা, অনর্থক কথা ও মিথ্যা বলিলে।

৬. ঝগড়া, ফাসাদ ও গালমন্দ করিলে। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্থর দিতে অক্ষম।

৭. ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করিলে।

৮. মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেললে, অথবা গড়গড় করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া। কিন্তু পানি যদি নাক দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোযা ভেঙে যাবে।

৯. স্ত্রীকে কামভাবের সঙ্গে স্পর্শ করিলে।

১০. মুখে কিছু চিবিয়ে শিশুকে খাওয়ালে।

১১. ছোলার কণার চেয়ে ছোট কিছু দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে গিলে ফেললে। 

আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার উপায়

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় নাঃ-

১. ভুলে কিছু খেলে বা পানি পান করলে। রোযা অবস্থায় অনেক সময় অনিচ্ছায় কিছু খেলে বা পানি পান করিলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছা করে কিছু খেলে বা পানি পান করিলে রোযা ভঙ্গ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

২. অনিচ্ছাকৃত বমি আসা অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়)।

৩. বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া।

৪. রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে স্বপ্নদোষ হলে। তবে, ইচ্ছাকৃতভাবে হলে রোযা ঙ্গ হবে।

৫. অসুস্থতাজনিত কারণে বীর্যপাত হলে।

৬. স্বামী-স্ত্রী চুম্বন ও আলিঙ্গন করিলে।

৭. শরীর ও মাথায় তেল ব্যাবহার করিলে। 

৮. হাত বা পায়ের নখ ও মাথার চুল কাটিলে বা ছোট করিলে।

৯. অনিইচ্ছায় মুখের ভিতর ধুলাবালি,মশা,মাছি ঢুকে গেলে।

১০. সুগন্ধি ব্যাবহার করিলে। সাধারণত আতর ও অন্যান্য সুগন্ধি আছে যেগুলো ব্যাবহার করা সুন্নাত। এগুলো ব্যাবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে, রমজান মাসে সুগন্ধি ব্যাবহার না করাই উত্তম।

১১. অনিচ্ছায় কানে পানি প্রবেশ করিলে।

১২. চোখে সুরমা, ড্রপ বা ঔষধ ব্যবহার করিলে।

১৩. দাঁতের ফাকে গোসত আটকে থাকিলে। সেহরির সময় শেষ হওয়ার পরে দাঁতের ফাকে গোসত আটকে থাকলে এটা খেয়ে ফেললে রোযা ভাঙ্গবে না। (যদি গোসত এর পরিমান কম থাকে)।

১৪. মেসওয়াক করার সময় দাঁত থেকে রক্ত বের হলে। যদি রক্ত গলার ভিতর না যায়, তবে রোযা ভাঙ্গবে না।

১৫. ঠাণ্ডার জন্য গোসল করিলে।

১৬. রোযা অবস্থায় টিভি বা মোবেইলে কোনো কিছু দেখিলে। তবে, ইসলাম নিষিদ্ধ কোনো কিছু দেখা যাবে না। 

আরও পড়ুন- ঈদের নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা

সর্বশেষ একটি হাদিসঃ-

হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন,
“বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোযাদার ব্যতিত আর কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না“। (বুখারী ও মুসলিম)

বন্ধুরা, আশা করছি রোযা ভঙ্গের কারণসহ এ সম্পর্কিত আরও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। পোস্টটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই লাইক দিয়ে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোস্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ ; যা নিত্যদিন ব্যবহারযোগ্য

আজকের আর্টিকেলে ১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ নিয়ে হাজির হয়েছি যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই ব্যবহার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *