জায়গা জমির পরিমাপ নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়নি এরকম জমির মালিক খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। বিভিন্ন সময় জায়গা-জমি পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে এবং অধিকাংশ সময়ই তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই এসকল সমস্যার সঠিক ও দ্রত সমাধান পেতে জমি পরিমাপের সূত্র সমূহ জেনে রাখা জরুরি।
যদিও এসকল সূত্র জানার মাধ্যমে আপনি নিজে পরিপূর্ণ আমিন হতে পারবেন না। কিন্তু কোনো খারাপ ব্যক্তি বা আমিন নিজে আপনাকে কোনো ভুল মাপ বুঝানোর চেষ্টা করলে আপনি তা বুঝতে ও সমাধান করতে পারবেন। অপরদিকে কেউ জমির পরিমাপ নিয়ে প্রতারিত হলে তাকে সাহায্য করতেও পারবেন।
অতএব, জায়গা-জমির সঠিক অংশ বুঝে পেতে অবশ্যই জমির পরিমাপ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা প্রত্যেকেরই জরুরি। আর এই জমির পরিমাপ সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে আজকের জমির পরিমাপ আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম!
➤ আরও পড়ুন- BCS ক্যাডার কোন পদে কতটুকু সুবিধা ও অসুুবিধা
জায়গা-জমি পরিমাপ করার পদ্ধতিঃ-
জমি পরিমাপের অসংখ্য পদ্ধতি রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জমি পরিমাপ করা হয়। আমাদের দেশেও (বাংলাদেশে) বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জমির পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
তবে, যত রকম পদ্ধতিতেই পরিমাপ করা হোক না কেনো, জমি পরিমাপের সকল সূত্র প্রত্যেক ব্যক্তি ও এলাকায় একই থাকে। সুতরাং যদি আপনি জমি পরিমাপের এসকল সূত্র সম্পর্কে অবগত থাকেন, তাহলে যেই নিয়মেই জমির পরিমাপ করা হোক না কেনো আপনি তা বুঝতে সক্ষম হবেন।
অসংখ্য পদ্ধতির মধ্যেও জনপ্রিয় দুটি পদ্ধতিতে জমির পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
যথা- ১. শতাংশ ও ২. কাঠা।
১. শতাংশঃ- একশত ভাগের এক ভাগ বা এক অংশকে বলা হয় এক শতাংশ বা এক শতক।
২. কাঠাঃ- এক কাঠা সমান ১.৬৫ শতাংশ। কাঠার উর্দ্ধতর একক হচ্ছে বিঘা এবং বিঘার উর্দ্ধতর একক হচ্ছে একর। ২০ কাঠা সমান এক বিঘা এবং ৩ বিঘা সমান এক একর জমি। এক বিঘা সমান ০.০২৫ হেক্টর যা ২৫০০ বর্গ মিটার এর সমান।
বাংলাদেশে জমি পরিমাপের পদ্ধতিঃ-
আমাদের বাংলাদেশে জমির পরিমাপ বের করার জন্য জনপ্রিয় দুটি উপায় অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
যথা- ১. চেইন পদ্ধতি ও ২. ফিতা পদ্ধতি।
সরকারিভাবে কোনো জায়গা বা জমি পরিমাপ করা হলে অধিকাংশ সময় সেখানে এই চেইন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অপরদিকে সাধারণ আমিন বা সার্ভেয়ারগণ ফিতা ব্যবহার করে জমির পরিমাপ বের করে থাকেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জমির পরিমাপ কম হলে ফিতা ও বেশি হলে চেইন পদ্ধতি ব্যবহার করা অধিক বেশি সুবিধাজনক।
➤ আরও পড়ুন- ঔষধ ছাড়া স্বাস্থ্য ভাল রাখার ২০টি কার্যকরী উপায়
জমি পরিমাপের সূত্রসমূহঃ-
লিংক পরিমাপকঃ-
বাংলাদেশে লিংক এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতেছে। উল্লেখ্য যে, চেইন বা শিকলের একক হচ্ছে লিংক। লিংক এর সূত্রাবলি নিম্নরূপ-
১ লিংক = ৭.৯ ইঞ্চি
৫ লিংক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি
১০ লিংক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চি
১৫ লিংক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি
২০ লিংক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি
২৫ লিংক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি
৪০ লিংক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি
৫০ লিংক = ৩৩ ফুট
১০০ লিংক = ৬৬ ফুট
১০০ লিংক = ১ গান্টার শিকল বা ১ চেইন
১০০০ বর্গলিংক = এক শতক
২০০০ বর্গলিংক = ৪ করা = ১ গণ্ডা
৫০০ বর্গলিংক = ৩ কান্তি = ১ করা
১,০০,০০০ বর্গলিংক = এক একর।
বিঘা পরিমাপকঃ-
১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ = ১ পাকি
১ বিঘা =২০ কাঠা
১ বিঘা = ৬৪০০ বর্গহাত
১ বিঘা = ৩৩০০০ বর্গলিংক
১ বিঘা = ১৬০০ বর্গগজ
১ বিঘা = ১৪৪০০ বর্গফুট = ১৩৩৮ বর্গ মিটার
১ বিঘা = ১৬ গন্ডা ২ করা ২ ক্রান্তি
৩ বিঘা = ১ একর (মোটামুটি) = ১৬০০ বর্গইয়ার্ড।
কাঠা পরিমাপকঃ-
১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট = ৮০ বর্গগজ
১ কাঠা = ৬৬.৮৯ বর্গমিটার
১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ
১ কাঠা = ১৬ ছটাক
১ কাঠা = ৩২০ বর্গহাত
২০ কাঠা = ১ বিঘা
৬০ কাঠা = ১ একর
১৪৮২০ কাঠা = ১ বর্গকিলোমিটার
১৪৮.২ কাঠা = ১ হেক্টর।
কানি পরিমাপকঃ-
১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট = ১৬১৯ বর্গমিটার = ৪০০০০ বর্গলিংক = ৮০ করা
১ কানি = ৭৬৮০ বর্গহাত = ১৯৩৬ বর্গগজ = ১২০ শতাংশ
১ কানি = ২০ গন্ডা = ৪০ একর
১ কানি = ২০ গন্ডা=৪০০০০ বর্গলিংক
১ কানি = ২৪ কাঠা।
➤ আরও পড়ুন- একজন আদর্শ বাবার উপদেশ
শতাংশ নির্ণয়ের সুত্রঃ-
১.৬৫ শতাংশ = ১ কাঠা = ১৬৫ অযুতাংশ =৭২০ বর্গফুট (মোটামুটি)
১ শতাংশ = ১ শতক = ৪৩৫.৬ বর্গফুট (মোটামুটি)
১ শতাংশ = ১০০ অযুতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক
৩৩ শতাংশ = ১ পাকি = ১ বিঘা = ২০ কাঠা
১ শতাংশ =১৯৩.৬ বর্গহাত
২৪৭.১০৫ শতাংশ = ১ আয়ের।
একর পরিমাপকঃ-
১ একর = ১০ বর্গচেইন = (৬৬*৬৬০) = ৪৩৫৬০ বর্গফুট
১ একর = ১০০ শতক = ৪৩৫৬৯ বর্গফুট
১ একর = ১০০ শতক = ১০০০০০ বর্গলিংক
১ একর = ১৯৩৬০ বর্গহাত
১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ
১ একর = ৪০৪৭ বর্গ মিটার = ০.৬৮০ হেক্টর
৬৪০ একর = ১ বর্গমাইল
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
১ একর = ৬০.৫ কাঠা
১ একর = ২ কানি ১০ গন্ডা ( ৪০ শতক কানি অনুসারে)
২৪৭ একর = ১ বর্গকিলোমিটার।
হেক্টর পরিমাপকঃ-
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
১ হেক্টর = ৭.৪১ বিঘা
১ হেক্টর = ১৪৮.২ কাঠা
১ হেক্টর = ১০৬৭০৪ বর্গফুট
১ হেক্টর = ১০০০০ বর্গমিটার = ৯৯১৩ বর্গমিটার
১ হেক্টর = ১১৯৬০ বর্গগজ
১ হেক্টর = ১.৪৭ একর
১ আয়ের = ২৮.৯ বিঘা
১ হেক্টর = ১৪৭.১০৫ শতক
১ হেক্টর = ৪৭৮৯.৫২৮ বর্গহাত
১ হেক্টর = ১০৭৬৩৯ বর্গফুট
১ হেক্টর = ১১৯৫৯.৮৮২ বর্গগজ
১ হেক্টর = ৭.৪৭৪ বিঘা
১ হেক্টর = ১০০ আয়ের।
➤ আরও পড়ুন- গণিতের সকল সূত্র সমূহ
গন্ডা পরিমাপকঃ-
১ গন্ডা = ৪ করা= ৮৬৪ বর্গফুট = ৬ বিঘা
২০ গন্ডা = ১ কানি = ৪০০০০ বর্গলিংক = ১ ছতাক
১ গন্ডা = ৩৮৪ বর্গহাত
১ গন্ডা = ৯৬.৮ বর্গগজ
১ গন্ডা = ৮০.২৫ বর্গমিটার।
চেইন পরিমাপকঃ-
১ চেইন = ৬৬ ফুট = ১০০ লিংক = ৮৮ হাত
১ চেইন = ২২ গজ = ২০.১২ মিটার = ৭৯২ ইঞ্চি
১০ বর্গচেইন = (৬৬*৬৬০) = ৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর
১ বর্গচেইন = ১০০০০০ বর্গলিংক = ১ একর
১০ বর্গচেইন = ১৯৩৬০ বর্গ হাত।
করা পরিমাপকঃ-
১ করা = ২১৬ বর্গফুট
১ করা = ২৪.২ বর্গগজ
১ করা = ২০.০৬ বর্গমিটার
৪ করা= ৮৬৪ বর্গফুট = ১ গন্ডা
১ করা = ৯৬ বর্গহাত
১ কানি = ৭২ বর্গফুট = ২০ তিল
৩.৬ বর্গফুট = ১ তিল
১ করা = ৪ কাক।
পাকি পরিমাপকঃ-
১ পাকি = ১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ
১ পাকি = ২০ কাঠা = ৩৩ শতাংশ
ক্রান্তি তিল পরিমাপকঃ-
১ ক্রান্তি = ১৬০.৬৬ বর্গলিংক = ২০ তিল = ৬.৬৮ বর্গ মিটার
৮.৩৩ বর্গলিংক = ১ তিল = ১.৬ বর্গহাত
১ ক্রান্তি = ৩২ বর্গহাত
১ তিল = ০.৩৩৪ বর্গমিটার = ০.৪০ বর্গগজ
১ ক্রান্তি = ২০ তিল = ৮.০৬ বর্গগজ
➤ আরও পড়ুন- কুরআন শরীফের ১১৪ টি সূরার নাম বাংলা অর্থসহ
ধুল পরিমাপকঃ-
১ কন্থ = 6 ডন্ট = ৭২ বর্গফুট
১ ধন্ধ = ৭ ধুল = ১২ বর্গফুট
১ ধুল = ৩০ রেনু = ১.৭১ বর্গফুট
১ রেনু = ০.০৫৭ বর্গফুট।
➤ শেষ কথাঃ- প্রিয় পাঠক, আশা করছি জায়গা জমির পরিমাপের সকল প্রকার সূত্রাবলি সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। এসকল সূত্র প্রয়োগ করার মাধ্যমে আপনি যেকোনো জমির পরিমাপ বের করতে সক্ষম হবেন। প্রয়োজনে জমির পরিমাপ সম্পর্কে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও ও ফেসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন।
’’জমির পরিমাপ’’ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই
———– ধন্যবাদ! ———–