Breaking News

ঈদের নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা জেনে নিন

ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য খুশির দিন। মুসলিম উম্মাহগণ বছরে দুটি ঈদ পালন করে থাকেন। আজকে আমরা সেই ঈদের নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা সম্পর্কে জানব। যেহেতু ঈদের নামাজ কেবল মাত্র বছরে দুই বার আদায় করতে হয়। এই কারণে অনেকের মাঝে ঈদের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে।

মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য দুটি দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করেছেন, যথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এই দিনগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। যাদের ওপর জুমুআর নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজের নিয়ম স্বাভাবিক নামাজের মতো নয়। যেমন- ঈদের দুই রাকাত নামাজে কোনো আযান, ইকামত নেই কিন্তু এতে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির রয়েছে।

ঈদের নামাজ উন্মুক্ত স্থানে বা খোলা ময়দানে আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করতেন। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। যদি উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে। (বুখারি : ১/১৩১)

গত কয়েকবছরে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশের মসজিদ কিংবা বাইরে বিশাল জামাআতে ঈদের নামাজ আদায়ে রয়েছে বিধি-নিষেধ। তাই মসজিদ ছাড়াও বাসা-বাড়িতেও ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে। তবে শর্ত হলো তা জামাআতে আদায় করতে হবে এবং খুতবা প্রদান করতে হবে।

সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধ হাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত; যেন নামাজের আগেই বেশি বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল মুগনি : ২/১১৭)

আরও পড়ুন- মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার সহজ কিছু উপায়

ঈদুল ফিতর সম্পর্কে একটি হাদিসঃ- হযরত আউস আনসারি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ফেরেশতাগণ রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর দিকে এগিয়ে আসো। উত্তম প্রতিদান ও বিশাল সাওয়াব প্রাপ্তির জন্য এগিয়ে আসো। তোমাদেরকে রাতে নামাজের নির্দেশ দেওয়া হলে তোমরা সে নির্দেশ মেনে নামাজ আদায় করেছো।

তোমাদেরকে দিনে রোজা রাখতে বলা হলে তোমরা সে নির্দেশও পালন করেছো, এক মাস রোজা রেখেছো। গরীব দুঃখীদের পানাহার করিয়েছো। এখন নামাজ পড়ার মাধ্যমে এগুলোর প্রতিদান ও পুরস্কার গ্রহণ করো। ঈদের নামাজ পড়ার পর ফেরেশতাগণের মাঝে একজন ঘোষণা দেন- তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা সফলতার পতাকা নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যাও। এ দিনটি হচ্ছে পুরস্কার প্রদানের দিন। আকাশে এ দিনকে পুরস্কারের দিনই নামকরণ করা হয়েছে।’ (তাবরানি)

ঈদের নামাজের নিয়মঃ-

১. প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধতে হবে। তারপর ছানা পাঠ করবেন।

২. তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন।

৩. তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়বে এবং এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন।

৪. তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।

৫. দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত ওঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন।

৬. তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন।

৭. নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। কেননা খুতবা শুনা ওয়াজিব। খুতবা পাঠ করা অবস্থায় কোনো কথা বলা বা অন্যকে কথা বলতে নিষেধ করা যাবে না।

৮. খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।

আরও পড়ুন- প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপস

ঈদের নামাজের সুন্নত সমূহঃ- 

১. অন্যান্য দিনের তুলনায় সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬)

২. মিসওয়াক করা। (তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/৫৩৮)

৩. গোসল করা। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের দিনে গোসল করতেন। (মুসনাদে বায‍যার, হাদিস: ৩৮৮০) ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৬০৯)

৪. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি দুই ঈদের দিনে সুন্দরতম পোশাক পরিধান করতেন। ( বায়হাকী : ১৯০১)

৫. শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা।(বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮)

৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা।(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০)

৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টিজাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম।

বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের নামাজের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। (আহমদ : ১৪২২) আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর খেজুর খেতেন বে-জোড় সংখ্যায়। (বুখারী : ৯০০)

৮. ঈদুল ফিতরের ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)লোকদেরকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।(বুখারী, হাদীস নং-১৪২১)

৯. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭)

১০. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (তিরমিযী : ১৮৭ )

১১. ঈদুল ফিতরের ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকাঃ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫)

১২. ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮)

১৩. যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬)

আরও পড়ুন- ঔষধ ছাড়া স্বাস্থ্য ভাল রাখার ২০টি কার্যকরী উপায়

ঈদের নামাজের মাসয়ালাঃ-

মাসয়ালা ১: ইমাম সাহেব জুমার মতো দু’টি খুতবা দেবেন। তবে জুমার খুতবা দেওয়া ফরজ আর ঈদের খুতবা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। খুতবা পাঠ করার সময় কথাবার্তা, চলাফেরা, টাকা উঠানো ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ।

মাসয়ালা ২: ঈদের নামাজের পূর্বে মহিলা হোক কিংবা পুরুষ, বাড়িতে কিংবা মসজিদে অথবা ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ।

মাসয়ালা ৩: সম্ভব হলে এলাকার সবাই একস্থানে একত্রে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। তবে কয়েক জায়গায় পড়াও জায়েজ।

মাসয়ালা ৪: ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে তার কাযা আদায় করতে হবে না, যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশকিছু লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা যেকোনো একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন।

মাসয়ালা ৫: ১ শাওয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরিয়তসম্মত কোনো কারণে ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে শাওয়ালের ২ তারিখে পড়ার অনুমতি আছে। এরপর আর নামাজ পড়া যাবে না।

মাসয়ালা ৬: কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সালামের পর যখন ওই ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতের (প্রথম রাকাত) জন্য দাঁড়াবে তখন প্রথমে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা), তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে ফাতিহা ও কেরাতের পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। ফাতিহার আগে নয়।

শেষ কথাঃ- ঈদের নামাজের নিয়ম ও অন্যান্য মাসআলা সম্পর্কে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে নিকটস্থ যেকোনো ওলামায়ে কেরাম কিংবা মসজিদের ইমাম সাহেব বা অনলাইনে গুগল বা ইউটিউব থেকে বিশ্বস্ত দলীল সহকারে জেনে নেবার অনুরোধ করছি।

বন্ধুরা, পোস্টটির মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবসময় সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদে ভালো থাকবেন। আমাদের আরও অন্যান্য পোষ্টগুলো ভাল লাগলে অবশ্যই পড়তে পারেন। পরবতীর্তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসার অনুরোধ করছি। আজ এই পর্যন্তই

———– ধন্যবাদ! ———–

About Bondhu24

Check Also

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ

১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ ; যা নিত্যদিন ব্যবহারযোগ্য

আজকের আর্টিকেলে ১০০টি ইংরেজি কমন ডায়লগ নিয়ে হাজির হয়েছি যা দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেকেই ব্যবহার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *